পুবের কলম প্রতিবেদক: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্যের কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠলেও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। এবার তাঁর হুঁশিয়ারি, অমর্ত্য সেনকে জমি ছাড়তেই হবে। তবে নোবেলজয়ীকে নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাজকর্মকে ভালো চোখে দেখছে না বাংলার বুদ্ধিজীবীরা।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন বিশিষ্টজনরা। বিশ্বভারতীর আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন তাঁরা। নোবেলজয়ীকে যাতে অপমান না করা হয় সেই আবেদন জানানো হয়েছে।
জমি বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিশিষ্টরা আবেদন করেন, ‘তিনি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যেন অমর্ত্য সেনকে লাগাতার অপমানের ইস্যুতে নীরবতা ভাঙেন।’
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিশিষ্টদের বক্তব্য, অমর্ত্য সেন যে জায়গাটিতে বসবাস করছেন, সেটি তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এখন বিশ্বভারতী তাঁকে পৈতৃক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে। এই ধরনের পদক্ষেপ গোটা দুনিয়ার কাছে বাঙালি ও দেশবাসীর মাথ নত হচ্ছে।
বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠিতে সই রয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, লেখক ভগীরথ মিশ্র, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কবি মন্দাক্রাতা সেন এবং অশোক মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর জমি সংক্রান্ত বিবাদ মূলত ১৩ শতক জমি নিয়ে। বিশ্বভারতীর দাবি, ওই জমি বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। তাঁকে আগামী ৬ মে’র মধ্যে সেই জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে অমর্ত্য সেন জানান সেই জমি তাঁর। তিনি কাগজপত্রও জমা করেন।
এ দিকে জমি বিতর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিশিষ্টদের লেখা চিঠির সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। তিনি দাবি করেন, অমর্ত্য সেন নিয়ম ভেঙে জমি দখল করে রেখেছেন। তবে বিজেপি আর যাই বলুক না কেন, বাংলার বিশিষ্টরা সরব হচ্ছেন নোবেলজয়ীকে অপমান করা নিয়ে। জানা গিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার নন্দনে প্রতিবাদ সভা হবে।
সূত্রের খবর, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়াতে বাংলার বিদ্বজ্জনেরা বৃহস্পতিবার নন্দনে একটি বৈঠকের ডাক দিচ্ছেন। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে জমি বিতর্কে নিজেদের মতামত জানাবেন তাঁরা। সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী এবং অচিন চক্রবর্তীর মতো বিশিষ্টরা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, অধ্যাপক সেনকে এই ধরনের নোটিশ দেওয়া লজ্জাজনক। এই ধরনের প্রচেষ্টাকে ধিক্কার জানানো উচিত।’
সেই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, অমর্ত্য সেন ইস্যুতে কয়েকজনকে নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। যাঁরা বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সরব হয়েছেন। এবারও তাঁরা নিজেদের মত জানাবেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় নন্দনের ৩ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে ওই বৈঠক হবে বলে পুবের কলমকে জানান লেখক অনিতা অগ্নিহোত্রী।’