পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বর্তমান সময়ে সমাজে একাধিক ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা সামনে আসছে। এর মধ্য সব থেকে উল্লেখ্যযোগ্য হল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এক অযাচিত শাসনের খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কোথাও মুসলিম যুবককে গণপিটুনি দিয়ে খুন আবার কোথাও বাসস্থান গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্মম ভাবে। এবার সেই রকমই একটি বিপর্যয় নেমে এসেছে উত্তরাখণ্ড টানেল বিপর্যয় ‘র্যাট মাইনিং’ টিমের শ্রমিক ওয়াকিল হাসানের জীবনে।
উত্তরাখণ্ড টানেল বিপর্যয় ২০২৩ সালের অন্যতম বড়সড় দুর্ঘটনার মধ্যে একটি। টানা ১৭ দিন ধরে মরণপণ লড়াই চালানোর পর উদ্ধার হয় ৪১ জন আটকে থাকা শ্রমিক। সেই উদ্ধারকারি দলের মধ্যে ছিলেন ওয়াকিল হাসান। বুধবার বাড়ি ফিরে এসে তিনি হতবাক হয়ে যান। কারণ হাসান দেখেন, দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ডিডিএ) নির্দেশে উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাজুরি খাস এলাকার শ্রী রাম কলোনিতে তার বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। হাসান জানান, বুধবার ঘটনার সময় আমি ও আমার স্ত্রী বাড়িতে ছিলাম না। সন্তানেরা ছিল। খবর পেয়ে আমি দৌড়ে গিয়ে ওদের থামতে বলি, কিন্তু ওরা আমার একটা কথাও শোনেনি। ৪৫ বছরের ওয়াকিল হাসান ‘রকওয়েল এন্টারপ্রাইজ’ নামক সংস্থায় ‘র্যাট হোল’ মাইনার্স খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
হাসানের অভিযোগ, এই এলাকায় একমাত্র তার বাড়িই লক্ষ্যবস্তু। একই লাইনে আরও বাড়ি আছে, কারণ এটা একটা কলোনি। এই কলোনিতে খালি আমার বাড়িই ভাঙা হয়েছে। এই জমি ১৯৮৭ সালে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, আমি ২০১২ সাল থেকে এখানে আছি। ৮০ গজ প্লট রয়েছে। নভেম্বরে উত্তরাখণ্ড টানেল উদ্ধার অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের উদ্ধারের সময় নিজের জীবনের পরোয়া করিনি। উদ্ধারই ছিল আমার মূল লক্ষ্য। সেই কাজের জন্য আমি টাকা চাই না, আমি শুধু চাই আমার পরিবার নিয়ে এই বাড়িতে থাকতে। কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিন সন্তানের বাবা ওয়াকিল হাসান।
তিনি বলেন, এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে কোথায় যাব? বাড়ি ভাড়া দিয়েও থাকার মতো অবস্থা নেই আমাদের। এখনই বাড়ি ভাড়া পাবও না। হাসান বলেন, নভেম্বর উত্তরাখণ্ড বিপর্যয় আমাদের টিমে হিন্দু-মুসলিমভাইরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়েছি। পরিশ্রম করেছি, মিলিত প্রচেষ্টায় ৪১ জন আটকে পড়া শ্রমিককে উদ্ধার করেছি। কেউ একা কাজটি করেনি, আমরা এর মধ্যে দিয়ে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছি। হিংসা ছড়ানো আমাদের লক্ষ্য নয়। আমি দেশের জন্য ১০০ শতাংশ নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। হাসান সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, আমার এই বার্তা সকলের মধ্যে পৌঁছে দিন। ডিডিএ ২৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া বক্তব্য জানিয়েছে, খেজুরি খাস গ্রামে অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে দখল উচ্ছেদ অভিযান চলছে। জমিটি পরিকল্পিত উন্নয়ন জমির অংশ ছিল।