পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আর মাত্র কয়েক দিন তারপর খুশির ঈদ। আর ঈদ মানেই নানান রকমের খাবার। তার মধ্যে অন্যতম হল সেমাই। কিন্তু আপনি কি জানেন এই সেমাই এর উৎপত্তিস্থল কি ?
কোথা থেকে এই সেমাই এর প্রচলন। কি ভাবে বাঙালি হেঁশেলে সেমাই এল। সেমাই কি আরবি শব্দ? সেমাই কি মুসলমানি খাবার? কেনই বা ঈদের সময় প্রতিটি মুসলমান তার হেঁশেলে সেমাই রান্না করে? । সেমাইয়ের সঙ্গে এই সম্পর্ক কীভাবে স্থাপিত হলো তার হদিস পাওয়া একটু কঠিন। কিন্তু হ্যাঁ সেমাই কোনও আরবি শব্দ না। এমনকি সেমাই শুধু মুসলমান দের খাওয়ার নয়।
ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, গ্রিক শব্দ সেমিদালিস থেকে সেমাই শব্দের উৎপত্তি। যদিও এটি সরাসরি ঘটেনি। সেমিদালিস শব্দের মূল অর্থ হলো ময়দা। ময়দা অবশ্য ফারসি শব্দ। এই সেমিদালিস শব্দ সংস্কৃত ভাষায় প্রবেশ করে সমিদা রূপ ধারণ করে। সমিদা থেকেই সেমাই, সেমিয়া ইত্যাদি শব্দ তৈরি হয়।
অঞ্চলভেদে ভারতের সেমাই রান্নার প্রকরণ দুই রকম। এক হলো নামকিন সেমিয়া অর্থাৎ তা নোনতা স্বাদের। অন্যটা হলো সেভিয়া ক্ষির বা দুধ সেমাই। সে নিয়ে না হয় পরে আলোচনা করা যাবে। আজ আমরা মিষ্টি সেমাই নিয়ে আলোচনা করবো।
আপনি কি জানেন অঞ্চলভেদে এমনকি নানান দেশে সেমাইয়ের নানান রকমের নাম আছে। যেমন মিষ্টি স্বাদ ও চেহারার সেমাই পাওয়া যাবে গ্রিসে; নাম কাতাইফি। বাংলাদেশে ঘি দিয়ে ভেজে যে দমের সেমাই তৈরি হয়, প্রায় সেরকমই সেমাইয়ের দেখা পাওয়া যাবে আফ্রিকার সোমালিয়াতে; নাম কাদ্রিয়াদ।
ঈদুল ফিতরের সঙ্গে সেমাইয়ের সম্পর্কটা কীভাবে তৈরি হলো তার হদিস পাওয়াটাও একটু কঠিন। বাঙালির সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে গ্রন্থে যেটুকু পাওয়া যায় তার মধ্যে সেমাইয়ের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। তবে ফিরনির কথা আছে। নবাব আলিবর্দী খাঁর খাদ্য তালিকায় খিচুড়ির উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল। সেমাই এর সেই ভাবে কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যেও বেশ কিছু খাবারের নাম উল্লেখ থাকলেও, সেমাইয়ের কথা কোথাও নেই। হিন্দু কবিদের রচনাতে তো নেই। মুসলমান কবির রচনাতেও নেই। সেমাইয়ের দেখা পাওয়া যায় না মুঘলদের রন্ধনশালাতেও । অর্থাৎ সেমাই মুঘল খানার মধ্যে পড়ে না। অথচ সম্রাট বাবর এসেছিলেন যে আফগানিস্তান থেকে সেই আফগানিস্তানে এখনো সেমাই এর চল আছে। আগেও নিশ্চয় চলতো। সেখানে সেমাইকে বলে ‘সেমিরা’।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ বলতেই চোখের সামনে ভেসে আসে আনন্দময় একটা দিনের ছবি। সকালে মায়ের হাতে বানানও সেমাই, দুপুরে বিরিয়ানি আরও কত কি ? তাই ইতিহাসে সেমাই এর নাম থাক না থাক ,বর্তমান সময়ে সেমাই ছাড়া ঈদ কল্পনা করা যায়না।