পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিজেপিকে হারিয়ে ধূপগুড়ি’র দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়কে ৪,২১৩ ভোটে হারিয়ে জয় নিশ্চিত করলেন তৃণমুলের নির্মলচন্দ্র রায়। কার্যত কোনও ছাপই ফেলতে পারল না বাম-কংগ্রেস জোট। শুক্রবার সকালের লড়াইটা শুরু হয়েছিল সমানে সমানে।
পোস্টাল ব্যালট এবং প্রথম কয়েক রাউন্ডের গণনায় এগিয়ে ছিলেন বিজেপির তাপসী। তবে এর পর খেলা ঘুরতে থাকে। জয়ের পর ধূপগুড়ি জুড়ে উৎসবের মেজাজে মাতেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। বাংলা দিবস ঘোষিত হওয়ার পরের দিনই এমন জয়ে বাড়তি উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের গান ‘বাংলার মাটি বাংলার জল…’ গাইতে শোনা যায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের। রাজবংশী অধ্যুষিত এই আসন জয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গে বাড়তি অক্সিজেন পেল তৃণমূল কংগ্রেস।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি উপনির্বাচনেও জয় পায়নি বিজেপি। বিধানসভা ভোটে জেতা জোড়া আসন দিনহাটা এবং শান্তিপুরে উপনির্বাচনে হেরে যায় তারা। ফলে দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ধূপগুড়ি। অন্য দিকে, একের পর এক উপনির্বাচনে জিতলেও শেষটিতে হারতে হয়েছিল তৃণমূলকে। ফলে এই জয়টা রাজ্যের শাসক দলের কাছে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২১-এ সবুজ ঝড়ের মধ্যেও তৃণমূলের হাত থেকে ধূপগুড়ি ছিনিয়ে শাসক শিবিরে চিন্তার মেঘ তৈরি করেছিল। দু’বছর যেতে না যেতেই ‘হাওয়া বদল’। ধূপগুড়ি জয় সম্পূর্ণ হতেই উচ্ছ্বসিত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘এই জয় ঐতিহাসিক জয়।’ তিনি বলেন, ‘ধূপগুড়ির নির্বাচন ঐতিহাসিক নির্বাচন ছিল। বিজেপিকে হারিয়ে ওই আসনে তৃণমূল জিতেছে। ধূপগুড়ির মানুষকে অনেক ধন্যবাদ। সারা দেশেই জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভাল ফল করেছে।’
এবারের ধূপগুড়ি বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূলের থেকে বড় ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ ছিল অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। দলীয় প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে ধূপগুড়িবাসীর উদ্দেশে একাধিক তাৎপর্যপ্র্ণূ বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ধূপগুড়ি জয়ের পর নিজের ব্যক্তিগত এক্স হ্যান্ডেল (টুইটারে) দলীয়কর্মীদের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ লেখেন, ‘ঘৃণা ও ধর্মান্ধতার বদলে উন্নয়নের রাজনীতি গ্রহণ করার জন্য ধূপগুড়িকে ধন্যবাদ। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য প্রত্যেক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে ধন্যবাদ। ধূপগুড়ির সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। সেখানে চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকবে না। জয় বাংলা।’
২০২১ বিধানসভা নির্বাচন গোটা উত্তরবঙ্গে খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল। জলপাইগুড়ি জেলার একটি আসনেও জয়ী হতে পারেনি তৃণমূল। বিধায়ক বিষ্ণুপদের রায়ের মৃত্যুর পর ধূপগুড়িতে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়কে প্রার্থী করে তৃণমূল। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ধূপগুড়ির ফণাীর মাঠে সভা করে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। এমনকী তৃণমূল জিতলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ধূপগুড়িতে আলাদা মহকুমা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়ে দেন অভিষেক।
ফণীর মাঠে জনসভা থেকে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপির সাংসদ বা প্রয়াত বিধায়ক এলাকার উন্নয়নের জন্য কোনও কাজই করেননি। ধূপগুড়িকে পৃথক মহকুমা করা নিয়ে মানূষের দাবির কথা এরা বিধানসভা বা লোকসভায় তোলেননি। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে বিজেপি একটাও পোস্ট করেনি। আমি আজকের সভা থেকে দাঁড়িয়ে বলছি, মানুষ আস্থা রাখলে ধূপগুড়িকে পৃথক মহকুমা করার দায়িত্ব আমার। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পৃথক মহকুমা হবে ধূপগুড়ি। হাসপাতালকেও ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমি যা বলি, তাই করি।’
একথা অস্বিকারের উপায নেই যে ধূপগুড়িতে পজিতিভ রাজনীতি করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপির নেতারা তখন ব্যস্ত ছিলেন অভিষেক এবং মমতার কুৎসা করতে। ধূপগুড়িতে বিজেপির ভোটার রয়েছে। কিন্তু ধূপগুড়ির মানুষ এখন অনেকটাই হতাশ। তাদের অনেকেরই আক্ষেপ মানুষের জন্য কাজ করার নেতা নেই। কেবল বিরোধিতা দিয়ে রাজনীতি হয় না। কিছু করে দেখাতে হয়। মনে করছেন সেখানকার সাধারণ মানুষজন।
তৃণমূল সরকার যখন একের পর এক উন্নয়ন কর্মসূচি নিচ্ছে, বঙ্গ বিজেপির নেতারা তখন মোদি ও অমিত শাহকে দেখিয়ে মানুষের ভোট পেতে চাইছে। তাদের সেই ফর্মুলা সেই বিধানসভার সময় থেকেই ফ্লপ করছে। কিন্তু নয়া কোনও পথ বঙ্গ বিজেপি ঠিক করতে পারছে না। এই জয় তৃণমূলের ইতিবাচক রাজনীতির ফল। ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তা প্রমাণ করে ঘাসফুল।