পুবের কলম প্রতিবেদকঃ হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল রাজধানীর জাহাঙ্গিরপুরী। ধর্মের তথাকথিত কারবারীদের পরিকল্পিত তাণ্ডবের বলি হয়েছিলেন নিরীহ নাগরিকরা। তাতেই ক্ষান্ত দেয়নি গেরুয়া শিবির। একটি বিশেষ ধর্মকে সবক শেখাতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নির্মাণও রেহাই পায়নি। জাহাঙ্গিরপুরীতে সেদিন কী ঘটেছিল, তার তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে শুক্রবার গেরুয়া বান্ধব দিল্লি পুলিশের বাধার মুখে পড়ল তৃণমূল প্রতিনিধিদল। লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নেতৃত্বে তৃণমূল প্রতিনিধিরা যাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলতে না পারে, তার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি অমিত শাহের অধীনে থাকা পুলিশ। যদিও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা।
জাহাঙ্গিরপুরীতে আসলে কী ঘটেছিল, তার কারণ অনুসন্ধানে বারাসতের লোকসভা সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নেতৃত্বে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গঠন করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন উলুবেড়িয়ার সাংসদ সাজেদা আহমেদ, অপরুপা পোদ্দার, শতাব্দী রায় ও অর্পিতা ঘোষ। শুক্রবার দুপুরে ওই প্রতিনিধিদল জাহাঙ্গিরপুরীতে পৌঁছেই দেখেন চারিদিকে অসংখ্য ব্যারিকেড দেওয়া। সি ব্লকের যে মসজিদের সামনে ওই দিন অশান্তির সূত্রপাত ঘটেছিল, সেই মসজিদে যাওয়ার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা এগনো মাত্রই বাধা দেন দিল্লি পুলিশের আধিকারিকরা। এ নিয়ে তৃণমূল নেত্রীদের সঙ্গে পুলিশের বচসাও শুরু হয়। পুলিশের বক্তব্য, এলাকাই শান্তি বজায় রয়েছে। নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।
পুলিশের সঙ্গে বচসার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যেই ঘুরপথে মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছে যান তৃণমূল সাংসদরা। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে হনুমান জয়ন্তীর দিন কী ঘটেছিল, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জেনে নেন। তৃণমূল প্রতিনিধিদলের প্রধান কাকলি ঘোষ দস্তিদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আসল ঘটনার কথা যাতে প্রকাশ্যে না আসে তার জন্য পুলিশ এদিন আমাদের বিভ্রান্ত করার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। তা সত্বেও স্থানীয়দের সাহায্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পেরেছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনার দিন কী ঘটেছিল, সেই তথ্য জেনেছি। বেশ কিছু ছবিও তুলেছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট জমা দেব।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার ছয়দিন বাদেও গোটা এলাকায় এক ভয়ের বাতাবরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। আসল ঘটনা যাতে প্রকাশ না হয়, তার জন্য দিল্লি পুলিশ পাহারার নামে পরোক্ষে ভয় দেখিয়ে চলেছে।’ কেন তৃণমূল প্রতিনিধিদের বাধা দেওয়া হল, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যাই দিতে পারেননি ঘটনাস্থলে থাকা দিল্লি পুলিশের আধিকারিকরা। সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘উঁচুতলার নির্দেশেই এলাকায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’