আবদুল ওদুদ: বিশ্বমানের আর্কিটেক্ট হওয়ার জন্য ইতালির নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের সুযোগ পেলেন সৈয়দ মুহাম্মদ তৌসিফ। তৌসিফের আদিবাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাপার যদুরহাটি ‘দাসপুরে। যদিও বর্তমানে পিতার কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতার পাম অ্যাভিনিউতে।
সৈয়দ মুহাম্মদ তৌসিফ জানান, বিশ্বমানের আর্কিটেক্টের অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। পিতা সৈয়দ আলি ফারহাদ একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে আর্কিটেক সম্পর্কে নানা বিষয় জেনেছেন। তাই ছোট থেকেই তৌসিফের ইচ্ছে ছিল আন্তর্জাতিক মানের একজন আর্কিটেক্ট হওয়ার। আল্লাহ্ অশেষ ইচ্ছায় এই সেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে বলে তৌসিফ জানান।
ইতালির ‘পলিটেক নিকো ডি মিলানো’ নামে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আর্কিটেকচার আরবান ডিজাইনার’ কোর্সে মাস্টার্স করার সুযোগ পেয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ইতালি যাওয়ার কথা রয়েছে তার। ওই সময় সেখানে পঠন-পাঠন শুরু হয় বলে তৌসিফ জানান।
ইতালির মিলানে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শতবর্ষ প্রাচীন ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্য মনে করছেন তরুণ তৌসিফ। কলকাতার জুলিয়ান ডে স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ তৌসিফ। এর পর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএআরসিএইচ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালে এই কোর্স সম্পন্ন হয়। এরপর স্পেস থেকে ৬ মাসের ইন্টার্ন করেন। ইতালিতে পড়াশোনার জন্য গত ২ বছর ধরে প্রস্তুতি চালিয়ে গেছেন। গত নভেম্বর মাসে ইতালির ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। তার সমস্ত কিছু পরীক্ষা নেওয়ার পর জানুয়ারিতে ইতালির মিলান শহরের পলিটেকনিকো ডি মিলানো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। আর্কিটেক্ট বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিশ্বের নামকরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পড়ে পলিটেকনিকো ডি মিলানো বিশ্ববিদ্যালয়টি।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া এলাকার ছোট একটি গ্রাম থেকে উঠে আসে তৌসিফের পরিবার। এখনও গ্রামকে ভুলে যাননি। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে গ্রামে যান। নিজের দক্ষতায় গ্রামের মধ্যে পুরনো মসজিদটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছেন। পিতা সৈয়দ আলি ফারহাদ কলকাতা কর্পোরেশনের কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার। মা একজন গৃহবধূ। তাঁর মাও জুলিয়ান ডে স্কুলের ছাত্রী।
আর্কিটেক্ট হওয়ার জন্য কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে, এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ তৌসিফ জানান, পিতা এবং মাতা দু’জনের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তাঁর পিতা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় নানা কাজ দে’েছেন। বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে পিতার কাছ থেকে অনেক কিছু পরামর্শ নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানের আর্কিটেক্ট হতে গেলে কতটা পরিশ্রম করতে হয়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের পড়াশোনা হয়, সেই সম্পর্কে ২০২০ সাল থেকে চেষ্টা করে গেছেন। শেষপর্যন্ত জানুয়ারিতে সেই সুযোগ আসে। তৌসিফের পিতা সৈয়দ আলি ফারহাদ বলেন, ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। হাতের কাজ খুব সূক্ষ্ম। আর্কিটেক্ট হিসাবে সে সফল হবে সেই আশা রয়েছে। আল্লাহ্ তার ইচ্ছা সফল করুক। এই দোয়া করব।
বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে বিপুল খরচ প্রসঙ্গে তৌসিফ জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরোপুরি ইতালি সরকারের। বহু বিদেশি ছাত্ররা যাই সেখানে পড়াশুনা করতে। বিশ্বজুড়ে সুনামও রয়েছে। তারা স্কলারশিপও দেয়। সেখানে ২ ধরনের স্কলারশিপ দেওয়া হয়। মেরিট এবং ট্যালেন্ট বিযয়ে। এই দু’টিতেই আবেদন করা হয়েছে। যেকোনও একটা পেলেই উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে কোনও অসুবিধা হবে না বলে সে জানায়।