পারিজাত মোল্লা: রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনি লড়াই অব্যাহত কলকাতা হাইকোর্টে। সংবিধান প্রদত্ত দুই স্বতন্ত্র সংস্থার লড়াই এবার পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এর পর্যবেক্ষক নিয়োগ নাপসন্দ রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের। এবার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। চলতি মাসেই পঞ্চায়েত ভোটে ডিজি পাঠানোর নির্দেশ খারিজ হয় সিঙ্গল বেঞ্চে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডিজি পাঠানোর নির্দেশ খারিজ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গেল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আগামী সোমবার এই মামলার শুনানির সম্ভবনা আছে।
ভোটের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তারমধ্যেই সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে মামলা যাচ্ছে ডিভিশন বেঞ্চে। অতীতের ভোটে হিংসার কথা বিবেচনা করে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে চেয়েছিল। দাবি জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত খারিজ করেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।
এবার ডিভিশন বেঞ্চ গেল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পঞ্চায়েত ভোটে তাদের তরফে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে চেয়েছিল। তাদের বক্তব্য, -‘ পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই রাজ্যে হিংসার ঘটনা ঘটছে। তাই তারা জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়’।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। মামলার আবেদনে বলা হয়, -‘রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এভাবে নাক গলাতে পারে না’। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মামলা খারিজ করে দিয়ে জানায়,-‘ তারা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে পারবে না’। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে।এর আগে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর রাজ্যে ব্যাপক হিংসা ছড়ায়। ফল প্রকাশের পর রাজ্যজুড়ে হিংসা চলে। আদালতের নির্দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন হিংসার তদন্তে প্রতিনিধিদল পাঠায় রাজ্যে। তা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে রাজ্য সরকার। মুখ খোলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এখানে কিছু হলেই কেন্দ্র প্রতিনিধিদল পাঠায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ছুটে আসে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে তো তাদের যেতে দেখি না।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, যেই সময় হিংসার কথা বলা হচ্ছিল, তখন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব ছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হাতে। নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়।এবার পঞ্চায়েত ভোটেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষক পাঠাতে চেয়েছে। তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের। সিঙ্গেল বেঞ্চের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে।আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।