পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: ‘আইন আইনের পথে চলবে’, ‘আমরা দেখছি’- ইত্যাদি ইত্যাদি নীতিবাক্য শোনানোর পর, শেষ পর্যন্ত ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজি হল কেন্দ্র। বুধবার আন্দোলনকারী কুস্তিগিরদের সঙ্গে ৫ ঘন্টার বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান, ব্রিজভূষণ শরণ সিং-র বিরুদ্ধে তদন্ত ১৫ জুনের মধ্যে শেষ করা হবে। এই আশ্বাস পেয়ে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানান বজরং-সাক্ষী সহ অন্যান্য কুস্তিগিররা।
বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান, ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশ করা হবে। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচন প্রক্রিয়া ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি তৈরি করা হবে। সেই কমিটির মাথায় থাকবেন এক জন মহিলা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত্রি ১২টা ৪৭ মিনিটে ট্যুইট করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। সেখানেই আলোচনার জন্য কুস্তিগিরদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। এরপর বুধবার সকালে তাঁর বাসভবনে যান সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া সহ অন্যান্য কুস্তিগিররা।
বৈঠকে কুস্তিগিররা ৫টি দাবির কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, প্রথমত, কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করতে হবে কোনও মহিলাকে। দ্বিতীয়ত, নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও অবাধ। তৃতীয়ত, ব্রিজভূষন ও তার পরিবারের কোনও সদস্য কুস্তি ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না। চতুর্থত, নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিন আন্দোলন করার জন্য কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করতে হবে। পঞ্চমত, ব্রিজভূষণকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
ব্রিজভূষণকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ছাড়া অন্য চারটি দাবি মেনে নেন ক্রীড়ামন্ত্রী। এদিন কুস্তিগির বজরং পুনিয়া জানান- কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত রাখছেন তাঁরা। ১৫ জুনের পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একই কথা বলেন সাক্ষী মালিকও। তিনি জানান- ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হবে।
উল্লেখ্য, এমাসেই আমেরিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে ভারতীয় মহিলা কুস্তিগিরদের আন্দোলনের খবর পৌঁছে গেছে বিদেশেও। এমন পরিস্থিতে যাতে বিদেশের মাটিতে নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে না পড়তে হয়, তাই আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে চাইছে কেন্দ্র বলে মত ওয়াকিফহাল মহলের।
উল্লেখ্য, ব্রিজভূষণ শরন সিং-র গ্রেফতারির দাবিতে ২৩ এপ্রিল থেকে যন্তরমন্তরে ধর্ণা দিচ্ছেন কুস্তিগিররা। কিন্তু প্রায় ৪০ টি মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে এতদিন নারাজ ছিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের আগে হঠাৎই আলোচনার পথ খুলে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত তাঁরা ব্রিজভুষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন নাকি যন্তরমন্তর থেকে নজর ঘোরাতেই এমনটা করা হচ্ছে, তাই এখন দেখার।