পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ আর পাঁচটা সাধারণ কাজের মতো ‘পেশা’ হিসাবে দেহ ব্যবসাকে স্বীকৃতি দিল উদার সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, যৌন কর্মের পরিষেবা প্রদানও আইর স্বীকৃত হওয়া উচিত। যারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তাদেরও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার আছে। বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই সংক্রান্ত ছটি নির্দেশিকা জারি করেছে। বিচারপতি নাগেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চে ছিলেন, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি এএস বোপান্না।
ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, যৌনকর্মীরাও আইনের চোখে সমান সুরক্ষার অধিকারী। যখন এটা স্পষ্ট যে, ‘যৌনকর্মী একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজের ইচ্ছাতেই তিনি যৌনতা বিক্রি করছেন, তখন পুলিশকে অকারণ হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাকে অহেতুক হেনস্থা করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যাবে না। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ এই দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে।’
বিচারপতি রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চ সংবাদ মাধ্যমকেও সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, যৌনবৃত্তিতে যুক্ত কেউ না চাইলে তাঁর পরিচয় ফাঁস করা উচিত নয়। যৌনবৃত্তিতে যুক্তদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সংবাদমাধ্যমেরও কর্তব্য। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে সরকারের কর্তব্য স্থির করে দিয়েছে। আদালত বলেছে, যৌনবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের প্রতি পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনের মানসিকতার পরিবর্তন করতে সরকার কী পদক্ষেপ করছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে হবে।
ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কোনও যৌনকর্মী কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হলে, তাঁকে সবরকম আইনি সহায়তা দিতে হবে। কোনও পুলিশি অভিযানের সময় যৌনকর্মীদের পরিচয়ের গোপনীয়তার দিকে নজর রাখতে হবে। যৌনকর্মীদের অধিকারগুলি সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করতে হবে। শুধু দেহ ব্যবসাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার জন্য কোনও মহিলাকে তাঁর সন্তানের থেকে আলাদা করা যাবে না। কোনও শিশু পতিতালয়ে থাকছে মানেই তাঁকে পাচার করে আনা হয়েছে, এটা ধরে নেওয়া যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ নিয়ে অনেকে বলেছেন, যে উদারতা ও সহানুভূতি নিয়ে শীর্ষ আদালত এই রায় দিয়েছে, বাস্তব ক্ষেত্রে তার অপপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এই বৃত্তিকে সম্মানজনক পেশা হিসেবে দেখতে চাইলেও সমাজ কতটা তা মেনে নেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাশ্চাত্য বিশেষ করে ডেনমার্ক, নরওয়ারে মতো স্ক্যানডেনেভিয়ান দেশগুলিতে গনিকাদের এই ধরনের মর্যাদা প্রদান করে আইন রয়েছে। কিন্তু সেখানেও সমাজে তাদের মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। পুরুষদের দ্বারা পতিতাদের শোষণ ও অত্যাচার সেখানেও সমানে চলছে। এছাড়া এই রায়ের ফলে যারা নারীদের প্রলোভন, জোরপূর্বক কিংবা ব্যবসার জন্য পাচার করে থাকে অথবা এই পেশা গ্রহণ করতে রাজি করায় তারাও বিরাট সুবিধা পাবে। আইন তাদেরকেও কতটা পাকড়াও করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেবে। কিছু সমাজবিজ্ঞানীর মতে, একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট যদি মহিলাদের এই পেশা থেকে মুক্তি প্রদানের জন্য তাদের রোজগারের সাবলম্বী হওয়ার মতো উপযুক্ত করে তোলার কথা বলত এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে নির্দেশ দিত, তবে তা বোধহয় প্রকৃত অর্থেই ‘যৌনকর্মীদের’ সাহায্য করত। খুবই নগন্য সংখ্যক ছাড়া কেউ নিজ ইচ্ছায় পৃথিবীর কোথাও এই পেশা গ্রহণ করে বলে জানা যায় না।