পুবের কলম প্রতিবেদক: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের দিনেই আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সামনেই বিক্ষোভ দেখালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ।
এদিন সমাবর্তন চলাকালীন ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এসএফআই সমর্থক-পড়ুয়ারা। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে বিক্ষোভ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে রাজ্যপালকে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওপেন এয়ার থিয়েটার-এ সমাবর্তন চলাকালীন বাইরে লাগাতার স্লোগান দিতে থাকেন বামপন্থী ছাত্র-সংগঠনের সদস্যরা।
এই বিক্ষোভে শামিল হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের পড়ুয়ারা। ব্যানার-পোস্টার হাতে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন।
এদিকে সমাবর্তন চলাকালীন পড়ুয়াদের প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। এদিন বিক্ষোভরত পড়ুয়া-প্রতিনিধিদের বক্তব্যও শোনেন। পড়ুয়াদের দাবি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন আচার্য। একই সঙ্গে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার কথাও শোনেন এবং সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আলোচনা করার বিষয়ে আশ্বাস দেন।
এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ছাত্রছাত্রী-গবেষকরা।
উল্লেখ্য, এটাই প্রথম নয়। এর আগেও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন রাজ্যপালের সামনেই বিক্ষোভে শামিল হতে দেখা গিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের।
২০১৯ সালে সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে উত্তাল হয় যাদবপুর। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেন। ওঠে গো-ব্যাক স্লোগান।
তাঁর গাড়ি আটকানোর অভিযোগ ওঠে এসএফআই সহ একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। একাধিকবার এই সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঘেরাও হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
সম্প্রতি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। টানা ১২দিন অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন মেডিক্যালের পড়ুয়ারা। অবশেষে ১২ দিন পর নিজেদের অনশন ভঙ্গ করে নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানান, এবার থেকে নিজেরাই নির্বাচন করবে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ বা রাজ্য সরকার রাজি হোক বা না হোক নিজেরাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন করবেন পড়ুয়ারা।
এমবিবিএস-এর চারটি বর্ষে পাঁচটি করে মোট ২০টি পদে নির্বাচন হবে। টানা ১২দিন ধরে অনশনে অটল ছিল পড়ুয়ারা। অনশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন একাধিক পড়ুয়া। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্সি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাদে এই রাজ্যে শেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ২০১৭ সালে। সে বছর নির্বাচিত সংসদ ধরে রেখেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। জয়ী হয়েছিল এসএফআই। ২০২০ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কলা বিভাগে জয়ী হয়েছিল এসএফআই। তাই রাজ্যের সর্বত্র ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে অবিলম্বে নতুন করে নির্বাচন প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিক্ষোভে শামিল যাদবপুরের পড়ুয়ারা।