পুবের কলম প্রতিবেদক: ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার পড়ুয়াকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দিয়েছে রাজ্য সরকার। নভেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১৫ হাজার পড়ুয়াকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দিল নবান্ন। উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ প্রকল্পে সুবিধোভোগী পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ হাজারে নিয়ে যেতে চায় রাজ্য।
জানা গিয়েছে, বৈঠকে অনেক বিষয়ের মধ্যে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের বিষয়টিও ছিল। বকেয়া স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের আবেদনগুলি দ্রুত পূরণের কথা বলা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে।
সেইসঙ্গে মঞ্জুর না হওয়া এবং ঝুলে থাকা আবেদনগুলি অডিট করার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে আভ্যন্তরীণ কমিটি তৈরিরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড থাকলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ পায় পড়ুয়ারা। পড়ুয়া চাইলে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারে, আবার ১০ লক্ষও ঋণ নিতে পারে।
উল্লেখ্য, পড়ুয়ারাদের উচ্চশিক্ষার স্বার্থে রাজ্য সরকার একাধিক স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছে। তপশিলী জাতি-উপজাতি থেকে জেনারেল ক্যাটেগরির পড়ুয়া, সবার জন্যই আর্থিক বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রাজ্য সরকার জামিনদার হওয়া সত্ত্বেও ব্যাঙ্কগুলি স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ দিতে গড়িমসি করে। সেই সমস্যা দ্রুত দূর হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিয়মানুসারে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এমনকি ডাক্তারি, আইএএস, আইপিএস, ডব্লিউবিসিএস, ডিপ্লোমা পড়ার জন্য ছাত্ররা যে কোনও সময় এই ঋণ পেতে পারেন ছাত্রছাত্রী। এ ছাড়া ব্যাঙ্ক, রেলওয়ে, স্টাফ সিলেকশন কমিশন বা অন্য কোনও পেশাদার পাঠ্যক্রম এর জন্যেও ছাত্ররা কোনও বৈধ প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেই এই ঋণ পেতে পারেন। ছাত্র ঋণে সর্বোচ্চ দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যাবে।
আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ৪০ বছরের মধ্যে। ঋণের মেয়াদ থাকবে ১৫ বছর পর্যন্ত। কোর্স চলাকালীন যে কোনো সময়ে এই কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার জন্য আবেদনকারী সেল্ফ ডিক্লারেশন দিলেই হবে। তবে শর্তানুযায়ী তাঁকে অন্তত দশ বছর পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে। লোনের ক্ষেত্রে গ্যারান্টার স্বয়ং সরকার।
এই কারণেই ঋণ দানের ক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীর পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ কত, সিকিউরিটি আছে কিনা, অভিভাবক আদৌ টাকা পয়সা শোধ করতে সক্ষম কিনা এ ব্যাপারে কোনও অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে পারবে না ব্যাঙ্ক, ছাত্র ঋণ নেওয়ার বৈধ কারণ দেখালেই ঋণ পাবেন। যে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং কিছু আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এই ক্রেডিট কার্ড দেবে।
ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অভিভাবক চাইলে ঋণের ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারেন আগেভাগেই। সময়ের আগে কিস্তি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আলাদা করে কোনও পেনাল্টি বা প্রসেসিং চার্জ দিতে হবে না। একজন ছাত্র ঋণ শোধ করার জন্য মোট সময় পাবেন ১৫ বছর।
এই ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার হবে ৪ শতাংশ। সরল সুদের হারে ঋণ শোধ করতে হবে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে সুদের হার বাড়বে এমনটা নয়, গোটা পর্ব জুড়েই সুদ থাকবে নির্দিষ্ট।
এই ঋণের মধ্যেই ছাত্রকে একটি জীবন বিমা করিয়ে দেওয়া হবে। সেই বিমার প্রিমিয়াম শিক্ষার্থীকে দিতে হবে লোনের পরিমাণ থেকেই। বিমার টাকা কেটে নেওয়া হবে।
ঋণের অর্থে ছাত্রছাত্রীরা যে কোনও শিক্ষা সরঞ্জাম কিনতে পারেন। শিক্ষা পরিবহণ খাতে অর্থ ব্যবহার করতে পারেন কোনও ছাত্রাবাসে থাকলে সেই অর্থও ঋণের টাকায় দিতে পারেন। যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী যুক্ত সেই প্রতিষ্ঠান হিসেবের বাইরে অর্থ খরচ করার এক্তিয়ার রয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।