সেখ কুতুবউদ্দিন: শিক্ষকদের স্বার্থ আগে, না পড়ুয়াদের স্বার্থ? শিক্ষকদের বেশিরভাগ আন্দোলন নিজেদের স্বার্থই উঠে আসে। আর পড়ুয়াদের স্বার্থকে তেমনভাবে প্রচার বা সমস্যা সমাধানে সরকারের নজরে আনতে দেখা যায় না।
এবার পড়ুয়াদের স্বার্থকেই আগে প্রধান্য দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। স্কুল শিক্ষা দফতরের পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলিতেও পড়ুয়া-স্বার্থের বিষয়টিও শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে দেখা যাবে।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের মোমিনতলা সিনিয়ার মাদ্রাসায় পড়ুয়ার সংখ্যা ২ হাজার। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ছাত্রী। আর শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৪। এই নিয়ে অভিভাবক মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই মাদ্রাসা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে সুয়োমোটো নোটিশ পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে অধিকাংশ মাদ্রাসা ছাত্র অনুপাত কম। শিক্ষককের সংখ্যা বেশি। উত্তরবঙ্গের জেলায় ছাত্র অনুপাত বেশি। শিক্ষক সংখ্যা কম।
উত্তর দিনাজপুরের কান্তিপা সিনিয়র মাদ্রাসায় পড়ুয়া প্রায় ৫ হাজার। আর শিক্ষক ৪ জন। বাঁকুড়ার ফকিরডাঙা মাদ্রাসায় পড়ুয়া ৩৬। আর শিক্ষক ৭ জন। বর্ধমান আটাঘর হাইমাদ্রাসায় ১৩২ জন পড়ুয়া। আর শিক্ষক ৪ জন। সিউড়ি হামিদিয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া ১৮২ এবং শিক্ষক ৭ জন। কাঁথি রহমানিয়ায় পড়ুয়া ২৮৪। আর শিক্ষক ২৪ জন। আরও অনেক মাদ্রাসায় পড়ুয়া বেশি, শিক্ষক কম। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক বেশি পড়ুয়া কম।
উল্লেখ্য, দক্ষিণবঙ্গের মাদ্রাসাগুলিতে উত্তরবঙ্গের তুলনায় সার্বিকভাবে শিক্ষক সংখ্যা বেশি। তবে অধিকাংশ মাদ্রাসায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই বলেও জানিয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
ডিএমই আবিদ হোসেন বলেন, রাজ্যে সরকার অনুমোদিত ৬১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। এই মাদ্রাসাগুলির মধ্যে বহু প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি, শিক্ষক সংখ্যা কম। আবার অনেক মাদ্রাসায় শিক্ষক সংখ্যা থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কম। এই নিয়ে পড়ুয়া বেশি এবং শিক্ষক কম থাকা মাদ্রাসাগুলিকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এবার বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষক বেশি, পড়ুয়া কম, সেই মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেশি পড়ুয়া থাকা প্রতিষ্ঠানে বদলি দেওয়া হবে।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার একটি আইন এনে বলেছে, পড়ুয়াদের স্বার্থে যে কোনও সময় মাদ্রাসায় শিক্ষকদের বেশি পড়ুয়া থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বদলি করা যেতে পারে।
শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষকদের বক্তব্য, রাজ্যের বহু মাদ্রাসায় শিক্ষক সংকট। সেই মাদ্রাসাগুলিকে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হোক।
সেই নিয়ে এবার মাদ্রাসায়শিক্ষা দফতর শিক্ষক বদলি কার্যকর করতে চলেছে। মাদ্রাসায় শিক্ষা দফতরের এই উদ্যোগ আবিদ হোসেন আরও বলেন, পড়ুয়াদের স্বার্থেই শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়। তাই এবার যে কোনও সময় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এক জায়গা থেকে অন্যত্র শিক্ষক বদলি হতে পারে। সম্প্রতি মাদ্রাসায় শিক্ষক বদলি নিয়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। কিছু শিক্ষকদের বেআইনি ভাবে বদলি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রসঙ্গে শিক্ষকদের বক্তব্য, পড়ুয়াদের স্বার্থে শিক্ষক বদলি হতে পারে। তবে যাতে বেআইনি বদলি না হয়, সেদিকেও লক্ষ রা’তে হবে।
রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত নিয়ে বিগত দিনগুলিতে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এবার রাজ্যের শিক্ষানীতিতেও উঠে এল পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাতের কথা। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের যেমন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রামাঞ্চলে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রেও এবার তেমন ব্যবস্থা আনার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে। সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা যাতে বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ বছর কিংবা প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য গ্রামাঞ্চলের স্কুলে শিক্ষকতা করেন, তা নিশ্চিত করতে একটি বদলি নীতির কথা বলা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে।
স্থানীয় স্তরে পরিস্থিতি কোথায় কীরকম রয়েছে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করে এই বদলি নীতি তৈরি করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কোন স্কুলে বর্তমান সময়ে কত পড়ুয়া ভর্তি হচ্ছে, তার সাম্প্রতিক ট্রেন্ডের উপর বিচার করে, কোন স্কুলে কতগুলি শিক্ষকের পদ থাকবে তা পুনর্গঠন করার পক্ষেও মত দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে। এই পদক্ষেপগুলির ফলে রাজ্যের সর্বত্র ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত স্বাভাবিক করা যাবে বলে মনে করছে কমিটি।
উল্লেখ্য, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গ্রামীণ স্কুলের র ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতের প্রসঙ্গ বিগত দিনে উঠে এসেছে হাইকোর্টেও।