আসিফ রেজা আনসারীঃ সম্প্রতি নবী সা. সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বিজেপির নেতানেত্রী নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত- সহ গোটা দুনিয়াতেই প্রতিবাদ হচ্ছে। কাতার, সউদি আরব-সহ প্রায় ২১টি দেশ ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে নিজেদের প্রতিবাদের কথা জানিয়েছে। এ দিকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও সাধারণ মুসলিমরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে উম্মাহকে শান্তি রক্ষার আহ্বান জানালেন মুসলিম নেতৃত্ব। মধ্য কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠক করে দোষীদের গ্রেফতারির দাবিও জানান তাঁরা।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতৃত্ব ও বিশিষ্টজন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রেড রোডের ইমামে ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমান, নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাশেমী, পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, রাজ্য জামাআতে ইসলামি হিন্দের সভাপতি মাওলানা আবদুর রফিক, রাজ্য জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সম্পাদক ক্বারী সামসুদ্দিন আহমেদ, জমিয়তে আহলে হাদিসের রাজ্য নেতা মারুফ সালাফি, কলকাতা খিলাফত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ, ফুরফুরা শরীফের সঙ্গে যুক্ত মাওলানা আবু সালেহ মুহাম্মদ রিজওয়ানুল করিম প্রমুখ।
সাংবাদিক সম্মেলনের প্রথমেই পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেন, নবী সা. সম্পর্কে নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তাতে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দুঃখিত হয়েছে। ২১টি দেশ ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমাদের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তির বার্তা দিয়েছেন এবং বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা অন্যান্য ধর্মের বিশিষ্টজন যেমন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বা বিবেকান্দকে শ্রদ্ধা করি, তেমনি হিন্দুরাও নবী সা.-কে শ্রদ্ধা করেন। ফলে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে তাঁরাও দুঃখিত। অনেক অমুসলিম বুদ্ধিজীবীও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মুসলিমরা নিজেদের জীবনের থেকেও নবী সা.-কে বেশি ভালোবাসেন, ফলে তাঁর অপমানে প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। তবে প্রতিবাদ যেন অশান্তির না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি কুরআন ও হাদিসের কথা উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ্ ফাসাদ বা অশান্তি সৃষ্টিকারীদের পছন্দ¨ করেন না। তিনি বলেন, যাঁরা প্রতিবাদের নামে রাস্তায় নামছেন এবং অন্যদের অসুবিধায় ফেলছেন তাঁদের কেউই সমর্থন করবে না। তিনি মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ ধরনের অশান্তির বিষয়কে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মানুষ ফায়দা তুলবে। নবী সা. সম্পর্কে অমুসলিমদের মধ্যে সঠিক ধারণা গড়ে তুলতে বেশি বেশি করে নবীচরিত বা জীবনী তুলে ধরার গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন ইমরান।
ইমামে ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমানও নবী সা.-র আদর্শ তুলে ধরার কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, কিছু মানুষ শান্তির পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে। তাঁর কথায়, প্রতিবাদের নামে অশান্তি ও রাস্তা অবরোধ করে মানু¡কে কষ্ট দেওয়া ইসলাম অনুমোদন দেয় না। তিনি হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া অশান্তির ঘটনার নিন্দা জানান এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন।
নাখোদা মসজিদের ইমামও বিজেপির নেতানেত্রীদের মন্তব্য নিয়ে সরব হন। তিনি নূপুর শর্মা ও নবীন জি¨ালের গ্রেফতারের দাবি জানান। রাজ্য প্রশাসনের কাছে তিনি আর্জি জানান যাতে অশান্তির চেষ্টা বরদাশ্ত না করা হয়। নবী সা.-র অবমাননার প্রতিবাদে করতে গিয়ে যাতে কোথাও মানুষ অসুবিধার মধ্যে না পড়ে সে আহ্বানও জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকার বা প্রশাসন কেন নবী সা.-র অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, প্রশ্ন তোলেন রাজ্য জামাআতে ইসলামি হি¨ের সভাপতি আবদুর রফিক। আইন মেনে প্রতিবাদ করার কথা বলে রাস্তা অবরোধ না করার পরামর্শ দেন তিনি। নবী সা. নিয়ে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান আবদুর রফিক। তিনি বলেন, ডোমজুড়, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা বা অন্য কোথাও অশান্তিকে মেনে নেওয়া যাবে না। নবী সা. শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাই দিয়ে গেছেন মানুষকে।
জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে ক্বারী সামসুদ্দিন আহমেদও অশান্তি বন্ধ করে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানান। দেশজুড়ে এত প্রতিবাদের পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন নীরবতা পালন করছেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি। সামসুদ্দিন সাহেব মুসলিমদের সংযত হওয়ার আহ্বানও জানান। মাওলানা মারুফ সালাফি ও নাসির আহমেদও একই কথা বলেন। কলকাতা খিলাফত কমিটির সম্পাদক নাসির আহমেদ বলেন, তাঁরা নূপুর শর্মা, নবীন জিন্দাল-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে কলকাতা জোড়াসাঁকো থানায় এফআইআর করেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।