সেখ কুতুবউদ্দিন: নবী সা.-এর বিরুদ্ধে বিজেপির মু’পাত্র নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালের কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে জনসভার আয়োজন করল রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। শনিবার ধর্মতলার রানী রাসমণি রোডের প্রতিবাদ সভায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর জীবন ও আদর্শ সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি নবী সা. এর স্ত্রীগণের পরিচয় ও কোন পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিবাহ করেছেন জনসভায় হাজার হাজার মানুষের সামনে তা ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালের নবী সা.কে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কড়া শাস্তির দাবি তোলেন তিনি।
সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির বক্তব্য, হজরত মুহাম্মদ সা. কখনও ভিন্ন ধর্মের প্রতি অসম্মান করা শেখায়নি। সেই জায়গায় নবী সা. কে অসম্মান করছে বিজেপি। নবী সা. কে জানতে হলে কোরান ও হাদিশ পড়তে হবে, তারপর মন্তব্য করতে হবে। আমরা ক’নও কোরআন-এর উপর আঘাত, মায়েদের উপর আঘাত বরদাস্ত করবো না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করে তা রুখবো। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি আরও বলেন, প্রতিবাদ চলবে। সেই সঙ্গে যাঁরা অন্যায় করছেন, এবং করাচ্ছেন, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই ‘উপরওয়ালা’ করবেন। বিজেপিকে সতর্ক করে তিনি বলেন, দেশের মধ্যে যা করা হচ্ছে, তা মানুষের জন্য অকল্যাণ।
বিজেপির দু’জন প্রচারক ভারতের সংবিধান অমান্য করেছে। মুসলিমদের উপর ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ আচরণ ক্ষুন্ন হচ্ছে। নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের মন্তব্যের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ছাড়া দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী নবী সা. বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের বিরোধিতা করেননি, এমনকী কুরুচিকর মন্তব্যকারী নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের শাস্তির দাবি তোলেননি। দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ কাঠামো খুন্ন হওয়ায় নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের আইনানুসারে আদালতের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দাবি জানান তিনি।
এদিন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির আবেদন, দেশের মুসলিমদের মধ্যেও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। সেই ফাঁদে যাতে মুসলিম সমাজ পা না দেয় সেদিকেও নজর রাখার বার্তা দেন। সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করে, মানুষের অসুবিধার সৃষ্টি করে প্রতিবাদ করতে নবী সা. বলে যাননি।
সিদ্দিকুল্লাহ’র বক্তব্যে, ‘হিন্দুরা মুসলিমদের দাদা, আর মুসলিমরা হিন্দুদের ভাই।’ তাই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবেই লড়বে। নবী অবমাননা মন্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্বের ৫৭টি দেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাতেও হেলদোল নেই বিজেপির। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের ৮৫০ কোটি মুসলিমের বসবাস। এর মধ্যে ২২০ কোটি মুসলিম রয়েছেন। তার মধ্যে অনেক দেশেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, সেখান কোনও সমস্যা তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার অব্যাহত রাখা হয়েছে। এটা হতাশাজনক।
সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘আচ্ছে দিন আয়েগা’ বলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। নায্য অধিকার না পাওয়ায় কৃষকরাও আন্দোলন করছেন।বাংলায় এনআরসি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যে কোনওভাবেই এনআরসি হতে দেওয়া হবে না। রাজ্যের সব সম্প্রদায়ের মানুষই তা রুখবে।
এদিনের সভায় উপস্থিত নাখোদা মসজিদের ইমাম শফীক কাশেমী বলেন, দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে ‘প্রেসানি’র মধ্যে রেখেছে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী সরকার। সব সময় হিন্দু মুসলিমকে নিয়ে বিভাজনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দেশের মানুষই তার প্রতিবাদ করছে। আগামীতেও প্রতিবাদ হবে। এদিনের সভায় নবী সা. অবমাননার বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক কুমারেশ চক্রবর্তী, অরুণজ্যোতি ভিক্ষু, শিক্ষিকা নন্দিতা গাঙ্গলী প্রমুখ।