পুবের কলম প্রতিবেদক: রামনবমী উপলক্ষে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে মিছিল হয়। চলে ডান্ডিয়া খেলা। পশ্চিমবাংলায় এর খুব একটা চল ছিল না বলেই মন্তব্য করছেন বিদ্বজ্জনেরা। এখন একটি গোষ্ঠী পতাকা ও অস্ত্র-সহ রামনবমীর মিছিল রাজ্যে চালু করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তবে এখনও অবাঙালিদের মধ্যেই এই মিছিল ও অস্ত্র প্রদর্শনীর প্রসার বেশি।
কয়েক বছর ধরে রামনবমী উপলক্ষে পুলিশ-প্রশাসন ত্রস্ত থাকে। কারণ, ঝান্ডাধারী মিছিল সংখ্যালঘু এলাকায় ঢুকে মসজিদের সামনে কিংবা মুসলিম মহল্লায় বিদ্বেষমূলক শ্লোগান, গালিগালাজ ও অগ্নিসংযোগ করে থাকে। হতাহতের ও সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা ঘটে।
উদ্বেগের কথা, পশ্চিমবাংলাতেও ধীরে ধীরে এই প্রবণতার প্রসার ঘটছে। বরং বলা যায়, প্রসার ঘটানো হচ্ছে রাজনৈতিক ও দলীয় স্বার্থে। ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে অশান্তিকারীরা বেছে নিয়েছে হাওড়া এবং উত্তর দিনাজপুরকে। হাওড়ার অশান্তির রিপোর্ট ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
হাওড়া সম্পর্কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাওড়াতে অনুমোদন দেওয়ার পথ পরিবর্তন করে রমযানের সময় মুসলিম এলাকায় অশান্তি সৃষ্টিকারীরা ঢুকে পড়ে গণ্ডগোল বাধিয়েছে। পুলিশ সঠিক ব্যবস্থা নেয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আশার কথা, হাওড়ার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ও ডালখোলাতেও পরিচিত বিশেষ বাহিনী একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রামনবমীকে বেছে নিয়েছিল দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য।
আশার কথা, মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এবং সাতবারের বিধায়ক করিম চৌধুরির মতো নেতৃবৃন্দ সজাগ দৃষ্টি রাখায় অশান্তি শুরুয়াত হলেও তা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। ফলে অশান্তিকারীদের যোজনাবদ্ধ চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে বলেই বলা যেতে পারে।
ইসলামপুরে ঘটনার সূত্রপাত ২৯ মার্চ বুধবার সন্ধ্যাবেলা ও রাতে। হঠাৎই দেখা গেল এলাকার বড় নূরী মসজিদে ৭০-৮০ জন বাইক চালক যুবক হাজির হয়েছে। তারা মসজিদের সামনে ও মহল্লায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজক শ্লোগান দিতে থাকে এবং সামনে দাঁড়ানো
মোটরসাইকেল, রিকশা এগুলিতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। এলাকার মুসলিমদের বেশিরভাগই তখন মসজিদে তারাবিহ-র নামাযের জন্য দাঁড়িয়েছেন।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে বাইক বাহিনীর গালাগাল, দেশদ্রোহী বলে শ্লোগান ইত্যাদির ফলে মুসলিম মহিলারাই প্রতিরোধ করার জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। ইতিমধ্যে এলাকার কিছু পুরুষও সেখানে হাজির হয়। প্রতিরোধের পর বাইক বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে চার-পাঁচজন বাইক-সহ ধরা পড়ে যায়। মন্ত্রী রব্বানি সাহেব পুলিশকে অশান্তিগ্রস্ত এলাকায় উপস্থিত হতে বলেন। বাইক বাহিনীর ধৃতদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ইসলামপুরে একই ধরনের অশান্তি হয় মুসলিম মহল্লা ইসমাইল চক, স্টেশন রোড প্রভৃতি এলাকায়। তবে প্রশাসন মন্ত্রী গোলাম রব্বানির অনুরোধ অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করতে থাকে। রামের নাম বদনাম করে যে অশান্তির কাজগুলি হয়, তাতেও শ্লোগান ওঠে ‘জয় শ্রীরাম’। মন্ত্রী রব্বানি, করিম চৌধুরি প্রমুখ পরেরদিন ৩০ মার্চ বিজেপি প্রধান রামনবমী মিছিলের সামনে হাজির হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী রায়চৌধুরি-সহ অনেককেই শরবত খাওয়ান। দেবশ্রী রায়চৌধুরি বলতে বাধ্য হয় ‘এই হচ্ছে আমাদের ভারতবর্ষ’।
ডালখোলায়ও অশান্তি হয়। বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জ্বালানো হয় গাড়ি। আক্রান্ত হয় পুলিশও। পুলিশের মতে, অকুস্থলে শ্লোগান প্রদানকারী একজন হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।
সবাই বলছেন, ইসলামপুরে দাঙ্গা বাধানোর চক্রান্ত শুভবুদ্ধিপরায়ণ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ, গোলাম রব্বানি, করিম চৌধুরির মতো নেতৃবৃন্দের তৎপরতায় ব্যর্থ হয়ে যায়। তবে বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী রায়চৌধুরি একটি দাবি তুলে দিয়েছেন। তা হল ইসলামপুরের নাম পরিবর্তন করে ‘ঈশ্বরপুর’ রাখতে হব