পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: পবিত্র মাহে রমযানে কোনোভাবেই আল্লাহ্তায়ালার অসন্তুষ্টিমূলক কোনও কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সর্বোপরি মাহে রমযান ও রোযা মহান মালিককে সন্তুষ্ট করার সুবর্ণ অবসর। এজন্য আমাদের মাহে রমযান ও রোযা হওয়া চাই হারাম, কবীরা গুনাহ ও নাফরমানি মুক্ত। মিথ্যা, প্রতারণা, অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার, সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত হওয়া। তবেই আমরা রমযান ও রোযার পূর্ণাঙ্গ পুরস্কার গ্রহণ করতে পারব।
আল্লাহ্পাককে সন্তুষ্ট করার, মুত্তাকি হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। এই লক্ষে রমযান মাসে কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এর অন্যতম হল—
সময়ের অপচয়রোধ
জীবন সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টার সমষ্টি। এই ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র সময়ই আমার জীবন। জীবনের একটি মুহূর্ত বেখেয়াল, অবহেলায় কাটিয়ে দেওয়া মানে এই সময়টা নষ্ট করে ফেলা। সে আর কখনও ফেরত আসবে না। এক একটি মুহূর্ত জীবনে একবারই আসে। প্রত্যেকটি দিন আগমন করে আমাকে আহবান করে তাকে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য। সে এও বলে দেয়, হিসাবের দিনেই কেবল সে আবার আমার সামনে হাজির হবে। যে ব্যক্তি সময়ের সদ্ব্যবহার করে, দুনিয়ার জীবনে সে সফলতা পায়। আমার রমজান ৩০ দিনের হলে ২৫,৯২,০০০ সেকেন্ডের সমষ্টি। রমযানের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে শুরু করে। তাই রমজানের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। আমি, আপনি যদি হিসাব করে এই সেকেন্ডগুলো কাজে লাগাতে পারি, তবে আমি আপনি অবশ্যই সফল হতে পারব। একজন পরীক্ষার্থী যেমন প্রত্যেকটি সেকেন্ডের হিসাব রেখে উত্তর লিখতে থাকে। তেমনি আমার আপনারও এই মূল্যবান সময়ের যথাযথ কদর করে রোযা পালন করলে, এই বছরের রমযান আমার আপনার জীবনে এক ব্যতিক্রম রমযান মনে হবে এবং এক ব্যতিক্রম ফল বয়ে আনবে। তাই গল্পগুজব, আড্ডা, টিভি দেখা, ফেসবুক অনলাইনে সময় ব্যয়, অবসরে শুধু ঘুমানো, এখানে সেখানে ঘোরাফেরা করা ইত্যাদি কাজগুলো বর্জন করি। তবে আমার রমযান হবে প্রাণবন্ত।
কথা হোক কম
যখন আপনি আমি কথা কম বলব, তখন অনেক অনর্থক এমন কি ফাহেশা কথা থেকে বেঁচে যাব। জীবনের অনেক সময়ও বেঁচে যাবে। বেশি কথা বললে, গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা এই ধরনের অনেক কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে যেতে পারে। যে সময় আমি অযথা গল্প কথায় লিপ্ত হব, এই সময়টাকে আমি পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, তাফসির অধ্যয়ন, হাদিস পাঠ, বিভিন্ন মাসনুন দোয়া, ইস্তেগফার, দরূদ শরিফ পাঠ, হযরত রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর শেখানো বিভিন্ন যিকিরে মশগুল হতে পারি। অনায়াসে অনেক বরকতের ভাগিদার হতে পারি।
কাজে গতিময়তা
কাজ ছাড়া জীবন অচল, আমরা কেউ ব্যবসা করি, কেউ চাকরি, কেউ কৃষিকাজ ইত্যাদি। এই রমযানে আমার কাজের সময়কে কমিয়ে আনি। কাজের গতি বাড়িয়ে দিই। কাজের গতি বাড়িয়ে কাজের সময়কে কমিয়ে আনি। এই বেঁচে যাওয়া সময়টিকে আমি ইবাদাত-বন্দেগী, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, দরূদ, ইস্তেগফার পাঠে ব্যয় করি। তাহলে দেখা যাবে কাজের এই গতিময়তা পুরো বছর আমাকে বরকত দেবে। আমার অনেক সময় হাতে থাকবে, বিশেষভাবে মাওলাকে ডাকার জন্য আমার সময়ের অভাব হবে না।
সোশ্যাল মিডিয়া বর্জন
রমযান মাস আমার জন্য আমার মহান রবের এক মহান উপহার। এই মাস সাওয়াব কামাইয়ের মাস। এই মাস সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার মাস নয়। আপনার বিশেষ কোনো প্রয়োজনে আপনি নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। আপনি হয়তো ভালো কিছু দেখতে চান, ভালো কিছু শুনতে চান। এই ভালো দেখার সঙ্গে, ভালো শোনার সঙ্গে কিছু খারাপও আপনার নজরে এসে যাবে। এই সময় আমি আপনি নেটওয়ার্কহীন অন্য ইবাদাতে মশগুল হই। যার নেটওয়ার্ক আমার আর আমার রবের সঙ্গে সংযোগ করে দেবে, ইনশাআল্লাহ্!