সেখ কুতুবউদ্দিনঃ পার্ক সার্কাস সংলগ্ন এলাকায় পুলিশি আত্মহত্যার পর কয়েক ঘন্টা কেটে গিয়েছে। তবে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন চত্বর শনিবার ছিল একেবারে শুনশান। আশপাশ ব্যারিকেডের মাধ্যমে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। রয়েছে পুলিশ আধিকারিকদের টহলদারি। লোয়ার রেঞ্জ রোডকেও ব্যারিকেডে ঘিরে দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। উপ হাই কমিশনের আশপাশে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। সেখানেও মানুষজনও কম। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ঘটনা দেখার ফলে এখনও মনের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
পুলিশকর্মীদের সাধারণ মানুষের আত্মরক্ষার জন্য রাখা হয়। এই ধরণের ঘটনা ঘটলে মানুষ তো আতঙ্কিত হবেই। তবে শুনছি, ওই পুলিশকর্মী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, একই সঙ্গে মাদকাসক্তও ছিলেন। তাহলে কীভাবে ওই কর্মীকে অস্ত্র তুলে দেওয়া হল। ডিউটিতে রাখা হল।
শনিবার পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানান,কোনওভাবে মানসিক অবসাদগ্রস্তদের হাতে আর্মস তুলে দেওয়া হয় না। মানসিক অবসাদ চিহ্নিত করা হয়। চিহ্নিত হলে তাঁদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। চিকিৎসকের পরামর্শেই তাদের ডিউটিতে পাঠানো হয়। তবে ওই ঘটনা প্রসঙ্গে লালবাজারের আধিকারিক বলেন, ওই পুলিশ কর্মী সর্বদা পাবজি গেম খেলত। যা তাকে মানসিক অবসাদে ফেলেছে।
পুলিশকর্মীরা কেন হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, এই নিয়ে মনস্তত্ত্ববিদদের বক্তব্য, পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে ছুটি কম। টানা কাজ করতে হয়। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে সামিল হতে পারেন না। অনেক সময় পরিবার ছেড়ে কাটাতে হয়। একাকীত্ব গ্রাস করে। জীবন ক্রমশ একঘেয়ে হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে পারিবারিক নানা চাপ যোগ হয়। সেই চাপ প্রভাব ফেলে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যে। তাছাড়া ভয়ানক মোবাইল গেমও এই জন্য দায়ী। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। আগ্রাসী হয়েই মানুষের উপর আক্রমণ করেন। নিজেকেই শেষ করে দিতে চান।
প্রসঙ্গত, চোড়ুপ লেপচা নামে ওই পুলিশকর্মী বছরখানেক আগে চাকরি পান। প্রথমে এসটিএফে যোগ দেন তিনি। সেই সময় অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদে অভিযান চালান। জানা গিয়েছে, গাড়ি থেকে মাঝপথেই নেমে পড়েন। ফেসবুক লাইভ করারও চেষ্টা করেন। অন্যান্য পুলিশকর্মীরা এনকাউন্টারে তাঁকে মেরে ফেলতে পারে বলে আতঙ্কে ভুগছিলেন। মানসিক সমস্যা যে রয়েছে তা আঁচ করেন অন্যান্য পুলিশকর্মীরা। অভিযানের মাঝেই দু’জন পুলিশকর্মী চোড়ুপকে নিয়ে কলকাতা ফিরে আসেন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মানসিক চিকিৎসাও করানো হয়।
জানা গিয়েছে, চোড়ুপ লেপচা মাদকাসক্তও ছিলেন। আত্মঘাতী পুলিশকর্মীর সহকর্মীদের দাবি, মানসিক চিকিৎসার পরেও নানারকম অস্বাভাবিক আচরণ করতেন চোড়ুপ। মানসিক সমস্যার চিকিৎসার পরেও কেন তাঁকে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হল? কেনই বা তাঁর হাতে দেওয়া হল আগ্নেয়াস্ত্র? শুক্রবারের ঘটনার পর বিভিন্ন মহলে উঠছে নানা প্রশ্ন। যদিও ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিপি বিনীত গোয়েল চোড়ুপের মানসিক অবসাদে ভোগার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে, ঘটনার পরই ওই এলাকার বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে। দেখা গিয়েছে, ঘটনার ঠিক কিছুক্ষণ আগে একটি বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠেছিলেন চোড়ুপ। নিচে নেমে আসার পর এই ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে। ঠিক কী কারণে সিঁড়ি দিয়ে ওই বাড়িটিতে উঠেছিলেন চোড়ুপ তা এখনও অস্পষ্ট। কারও খোঁজ করছিলেন পুলিশকর্মী, নাকি অন্য কোনও কারণ ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় নিহত বাইক আরোহী তরুণী রিমা সিংয়ের দেহ এবং চোড়ুপ লেপচার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে এনআরএস হাসপাতালে।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই উত্তরপ্রদেশে পাবজি গেমের প্রভাবে মাকে হত্যা করে ছেলে। পাবজি খেলতে মা বারণ করায় ১৬ বছরের ছেলে তার মাকে গুলি করে খুন করে। আরেকটি ঘটনা হল, বড় ভাই তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইল না পাওয়ায়, ছোট ভাইকে খুন করে কুয়োর মধ্যে ফেলে দেন। আবারও মুম্বই-এ ১৬ বছরের এক ছেলেকে তার মা ফোন দেননি। আর সেই অভিমানে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ওই ছেলেটি। পুলিশকর্মীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী পাবজি গেমই, বলছেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা