পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : শুক্রবার সল্টলেকের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ভবনে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ আয়োজিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ-এর ১৩৩তম জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোভিড পরিস্থিতির কারণে তার জন্মদিন ১১ নভেম্বরের পরিবর্তে এদিন পালন করা হয়। ‘মাওলানা আবুল কালাম আজাদ পুরস্কার’ প্রদান করা হয় সাহিত্যক আবুল বাসার’কে। বেগম রোকেয়া পুরস্কার দেওয়া হয় ভবানীপুর গালর্স হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা লিপিকা দাসকে। এদিনের অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন পর্ষদ সভাপতি ড. আবু তাহের কামরুদ্দিন।
স্মারক বক্তিতা প্রদান করেন কন্যাশ্রী এবং মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাওলানা আবুল কালাম আজাদের অবদান উল্লেখ করে পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেন ভারতীয় উপমহাদেশকে এক করে রাখার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন আবুল কালাম আজাদ। মাওলানা আবুল কালাম আজাদের জন্ম মক্কায় হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা ও পত্রিকা প্রকাশ কলকাতায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মন্ত্রীদের কাছে আহমদ হাসানের প্রস্তাব মাওলানা আবুল কালাম আজাদের কলকাতার বালিগঞ্জের বাড়িতে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সেই মিউজিয়ামের কোনও প্রচার নেই, নেই মানসম্পন্ন সংগ্রহও। মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে তাঁর স্মৃতিতে একটি উপযুক্ত মিউজিয়াম গড়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসায় ভর্তি হননি। তিনি বাড়িতে পিতার কাছে ও গৃহশিক্ষকের নিকট পড়াশোনা করেন।
মাদ্রাসা ভাবধারায় শিক্ষা হলেও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন ভাষাসহ ভূগোল, গণিত, দর্শন, যুক্তিবাদ, মহাকাশ বিজ্ঞান, রসায়ন বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ইমরান আরও বলেন, ইসলামি শিক্ষা সব সময় আধুনিক শিক্ষাকে নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া অখণ্ড বাংলাসহ ভারতে বিপ্লব এনেছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ রাজ্যের সোদপুরে তাঁকে কবর দেওয়া হলেও সেই কবরটি হারিয়ে গেছে।
এদিন তিনি উপস্থিত পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে হবে। কে হিজাব পরবে, কে পরবে না, তা কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। যারা হিজাব পড়ে ক্লাস করতে চায় তারা হিজাব পরেই ক্লাস করবে। তাদের শিক্ষার পথে কেউ বাধা হতে পারবে না।
আল-কুরাআনের আয়াত উল্লেখ করে জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আমাদের আদর্শ শিখিয়েছেন। তাঁর মত মানুষের বিকল্প এখনও জন্মায়নি এ দেশে।
তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত সমস্তটাই মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তাঁর বাল্যকাল, সংগ্রা্ কারাগারের জীবন, মেধা, ভ্রাতৃত্বের ফোকাশ, আরবি, সাহিত্য, বিজ্ঞান চর্চা, পত্রপত্রিকা প্রকাশ প্রভৃতি ভারতবাসীকে আধুনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন বহুদিন। ভারতকে স্বাধীন রাষ্ট্র করার জন্য লড়াই করেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মহিলা শিক্ষার প্রসার এবং দেশের বর্তমান পুরো শিক্ষা কাঠামো মাওলানা আজাদের গড়ে তোলা। ভারতভাগের বিরুদ্ধেও লড়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের অসীম অবদান রয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এদিন রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন।
সাংসদ নাদিমুল হক বলেন, বাংলাকে ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। এখন শুধু বাংলা বাঁচানোর লড়াই নয়, ভারত বাঁচানোর রাস্তা তৈরি হচ্ছে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ শিক্ষা ক্ষেত্রে মাতৃভাষার উপর জোর দিয়েছেন। তাই এ রাজ্যের অন্য ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিন স্মারক বক্তিতায় মাওলানা আবুল কালাম আজাদের জীবন ও আদর্শ তুলে ধরে উপাচার্য মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি বলেছিলেন ভারত ভাগ হলে উপমহাদেশে মুসলিমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের কথাও বলেছিলেন। স্বাধীন ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অপরিসীম অবদান রয়েছে বলে মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন।
কথা সাহিত্যিক আবুল বাসার বলেন, ধর্ম ও সভ্যতা, দুই’ই গুরুত্বপূর্ণ। হজরত মুহাম্মদ সা. হচ্ছেন সাম্যবাদের আচার্য। কুরআনে বিজ্ঞান,শিল্প – সাহিত্যের কথা বলা হয়েছে। আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি আরবি, ফারসি ও ইংরেজি থেকে রসদ সংগ্রহ করেছে।এদিনের অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষনে ড. আবু তাহের কামরুদ্দিন বলেন, আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে শিখিয়েছেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। তিনি ঐক্য চেয়েছিলেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. মমতাজ সংঘমিতা ডিএমই আবিদ হোসেন, সংখ্যালঘু দফতরের স্পেশাল সেক্রেটারি শাকিল আহমেদ, পর্ষদের সদস্য এ কে এম ফারহাদ, শিক্ষা দফতরের আধিকারিক পার্থ কর্মকার, পর্ষদের উপসচিব আজিজার রহমান, সাবির আজহারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা।