আবদুল ওদুদঃ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা দীর্ঘদিনের সীমান্তের মানুষদের নানাভাবে অত্যাচারিত হতে হয় বিএসএফদের হাতে। কখনও দেখা গিয়েছে সীমান্ত এলাকায় চাষ করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে কৃষকদের। আবার কখনও দেখা যাচ্ছে, নিজের জমিতেও চাষ করতে যেতে পারছেন না কৃষকরা।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছেও আবেদন করে সাময়িক স্বস্তি মিললেও সমস্যা থেকে যায় সারাবছরই। আর এই সমস্যা দেখা যায় বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলা যেমন, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু অংশ। বিশেষ করে বিএসএফের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কোচবিহার, মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলার কৃষকদের। মাঝেমধ্যে শোনা যায়, বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কোনও কৃষক।
আবার কখনও দেখা যায়, বিএসএফের গুলিতে চোরাকারবারিদের মৃত্যু হয় মাঝেমধ্যে। কখনও গরুপাচার, কখনও ফেন্সিডিল আবার কূনও ইয়াবা পাচারকারীদের মৃত্যু হয় বিএসএফের গুলিতে। কখনও কখনও সীমান্তের নিরপরাধ সাধারণ মানুষদেরও শিকার হতে হয় বিএসএফের। তবে সবথেকে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন কৃষকরা। তাঁরা নিজেদের জমি চাষ করতে যাওয়ারও অধিকার হারান।
সোমবার বিধানসভায় বিএসএফের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখলেন ভগবানগোলার বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। এ দিন তিনি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর লাগাতার অত্যাচার এবং গুলি চালানোর প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই সমস্যা যেমন কোচবিহার, মালদা এবং নদিয়ায় রয়েছে তেমনি সীমান্ত সংলগ্ন শহর মুর্শিদাবাদেও রয়েছে। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ভগবানগোলা এলাকায় অনেকটা জায়গাজুড়ে রয়েছে সীমান্ত এলাকা। এই এলাকার বহু মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছেন পদ্মা নদীর ভাঙনে।
কারও জমি কাঁটাতারের ওপারে আবার কারোর জমি কাঁটাতারের এপারে। আর এই সমস্ত জমিগুলিতে চাষ করতে গিয়ে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কৃষকদের। বিএসএফ মাঝেমধ্যেই কৃষকদের চাষ করতে অন্যায়ভাবে বাধা দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশিরাও কাঁটাতারের ওপারের জমি জোর করে চাষ করছে। বিএসএফ এবং বিডিআর ওই সমস্ত দুষ্কৃতিদের জমি চাষে সহায়তা করছে। কিন্তু ওই সমস্ত জমির মালিক সীমান্তের এপারের কৃষকরা। যাঁরা ভারতীয় নাগরিক, এ দেশের ভোটার এবং আইনত জমির মালিকও। অথচ তাঁদেরই বঞ্চিত করে বিএসএফ এবং বাংলাদেশি বিডিআররা।
আবার দেখা যায়, এই সমস্ত সীমান্ত এলাকার ভারতীয় নাগরিকদের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যেতে বাধা দেওয়া হয়। জল আনতেও বাধা দেওয়া হয়। সীমান্ত এলাকার মানুষদের নানাভাবে অত্যাচার করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিধানসভায় ভগবানগোলার বিধায়ক ইদ্রিশ আলি আরও অভিযোগ করে জানান, তাঁর বিধানসভা এলাকার আখেরিগঞ্জ এবং খড়িবোনা অঞ্চলে মানুষের ওপর বেশি অত্যাচার চালায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কাতলামারির চরেও নির্যাতন চালানো হয় মাঝেমধ্যেই।
এই সমস্ত এলাকার অনেকটা রাস্তাই কেন্দ্রীয় সরকারের। সেই সমস্ত রাস্তা সঠিকভাবে মেরামত করা হয় না। সীমান্ত এলাকার রাস্তাগুলির দায়িত্ব বিএসএফের হাতে থাকলেও তারা রক্ষণাবেক্ষণ করে না। এ দিন বিধানসভায় তিনি আরও একটি প্রশ্ন তোলেন। সেটি হল, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভাষা এখানে একটি বড় সমস্যা। অনেক বিএসএফ রয়েছেন, যাঁরা বাংলা বোঝেন না। ফলে সাধারণ মানুষরা তাঁদের দ্বারা অত্যাচারিত বেশি হন। তাই তিনি প্রশ্ন তোলেন পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকায় বিএসএফদের বাংলাভাষা জানতে হবে অথবা বাংলা ভাষাভাষী বিএসএফদেরই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করতে হবে।
ভগবানগোলার বিধায়কের প্রস্তাবটিকে পূর্ণ সমর্থন জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংক্ষিপ্ত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সীমান্তর এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। এর প্রতিকার করব। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গেও কথা বলব। সীমান্তর এই সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ায় লালগোলা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলি বলেন, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি বিধানসভায় তুলেছেন মাননীয় বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। আশা করব মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করে সীমান্ত সমস্যার সমাধান করবেন।