সুবিদ আবদুল্লাহ্ঃ মুর্শিদাবাদ সফরে এসে জেলার সংখ্যালঘুদের হাল-হকিকত নিয়ে খোঁজখবর নিলেন পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। বহরমপুরে শিল্পতালুকের স্পাইস গার্ডেনে বুদ্ধিজীবীদের এক সভায় হাজির ছিলেন জেলার পরিচিত সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাসেবি ও সমাজকর্মী শতাধিক মানুষ। তাঁদের কাছে জেলার সংখ্যালঘুদের দাবিদাওয়ার কথা তিনি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আলোচনায় উঠে আসে বর্তমান সরকারের শাসনে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা না হওয়ার বিষয়টি। সেইসঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন দলের অনুগামীদের হতাহতের প্রসঙ্গটি নিয়েও অনেকে কথা বলেন।
রাজ্যের একমাত্র সংখ্যালঘু মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ। তবে মুসলিমদের পাশাপাশি বসবাস করেন সংখ্যালঘু জৈন, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষও। নবাবী আমল থেকে জেলার মূল অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে জৈন, মুসলিম ও হিন্দু সমাজের শ্রমের ওপর ভর করে। ব্যবসা-বাণিজ্য কৃষি, অর্থনীতি ও শিক্ষায় জেলায় নানা সমস্যা রয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা সে সব কথা এদিন সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়াম্যান ইমরানের সামনে তুলে ধরেন। এই সভারও আয়োজন করেছিল জেলার নামকরা মুসলিম কনভেন্ট ‘আল ফালাহ্ মিশন’।
উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধিজীবী ইতিহাসবিদ আলিমুজ্জমান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সনৎ কর, রংধনু পত্রিকার সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল কালাম আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা আব্বাস আলি, শিক্ষক ও লেখক হাসিবুর রহমান, অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সামসুল হালসানা, শিক্ষক রুহুল আমীন, জনাব আবদুল বাকি শেখ, ড. গোলাম মর্তুজা, শারমিন রহমান প্রমুখ।
তাঁদের বক্তব্যে মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু সমস্যার নানান দিক উঠে আসে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলে জেলায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার কথা আলোচিত হয়। সভায় উপস্থিত অন্যান্য বুদ্ধিজীবীরা সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং তাঁকে নতুন দায়িত্বে অভিন¨ন জানান।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আল ফালাহ্-র কৃতী ছাত্রছাত্রী ও মিশনের অগ্রগতিতে অবদান রাখা কয়েকজনকে সংবর্ধনা-স্মারক দেওয়া হয়। পড়ুয়াদের মধ্যে ছিলেন আলি মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও ডা. তামান্না হক। আলি মুহাম্মদ ইব্রাহিম বর্তমানে বিচার বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। দুজনেই তাঁদের সাফল্যে আল ফালাহ্ মিশনের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
এছাড়া আল ফালাহ্-র অগ্রগতিতে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের মধ্যে দুজন মুমতাজ রশিদ ও রাজিউন নেসা কাদরিকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষিকা ইশিকা সেনগুপ্ত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ও পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এছাড়া অ্যাসোসিয়েসনস্ অফ মুসলিম প্রোফেশনালস্-এর প্রেসিডেন্ট আমির ইদ্রিসী ও হায়দরাবাদ থেকে আগত প্রাক্তন সেরিকালচার অধিকর্তা শিক্ষাকর্মী সৈয়দ মোসায়ক হুসেইনী কাদরীকেও আল ফালাহ্-র পক্ষ থেকে স্মারক প্রদান করা হয়।
এদিনের বুদ্ধিজীবী সভার নয়া নিযুক্ত মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যানকে সামনে রেখে আলোচনা চলতে থাকে। অনেকে বলেন, সাংবাদিকতার সূত্রে তাঁর লেখায় তিনি পিছিয়েপড়া সংখ্যালঘু সমাজের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে সরব থেকেছেন আজীবন। তিনি জেলার মানুষকে স্ব-উদ্যোগী হয়ে ওঠার দিকে জোর দেন। সেটা ব্যবসাই হোক কিংবা শিক্ষা। আল ফালাহ্ মিশনের উদাহরণ টেনে তিনি অভিভাবকদের শিক্ষাক্ষেত্রে আরও মনযোগ ও অর্থ ব্যয় করার আহ্বান জানান।
তিনি জানান, মুর্শিদাবাদ জেলায় শিক্ষার হার ক্রমশ উর্ধমুখী। এই জেলায় শিক্ষার হার বাড়লে স্বাভাবিকভাবে সংখ্যলঘুরাও এগোবে। কারণ, মুর্শিদাবাদ জেলা সংখ্যালঘু প্রধান। একইসঙ্গে বদলাবে জেলার অর্থনীতি ও সমাজ। সেইসঙ্গে ইমরানের বক্তব্য, আমাদের দেশকে সুনাগরিক উপহার দিতে হবে। আর সংখ্যালঘুরা শুধু নেবে না, তারা সমাজকে দেবেও। আল ফালাহ্-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলি সেই কাজই করছে। অধিকাংশ উপস্থিত ব্যক্তিরা তাঁর কথায় সহমত পোষণ করেন। সভাটি পরিচালনা করেন আল ফালাহ্ মিশনের প্রাণপুরুষ হারুন-উর-রসিদ।