আহমদ আবদুল্লাহ: হঠাৎ খোদ সংসদে তাও আবার মোদিজির তৈরি নতুন সংসদ যা তিনি মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের চিন্তাধারা অনুযায়ী তৈরি করেছেন, সেখানেই বিজেপির আসল মুখ দেখা গেল। আর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ এবং ‘ভারত মে কোই ভেদভাব নেহি হোতা’ ঘোষণার মুখোশটি খসে পড়ল।
বিষয়টি এখন সকলেই জানেন। দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে সংসদের মধ্যেই এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃনা ও বিদ্বেষ ভাষণের কথা প্রকাশিত হয়েছে।
কি বলেছিলেন বিজেপি নেতা রমেশ বিধুরী? তা উল্লেখ করতে সংকোচ হলেও বিজেপি ও সংঘ পরিবারের মনোভাব বোঝার জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে। হচ্ছিল চন্দ্রায়ন-৩-এর সাফল্য নিয়ে আলোচনা। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে বিজেপির ঘৃনা ভাষণ ও গালাগালাজে পোক্ত রমেশ বিধুরী চিৎকার করে সংসদে দানিশ আলিকে বলতে থাকেন, ‘তুই হচ্ছিস মোল্লা উগ্রবাদী, কাটুয়া (অর্থাৎ খতনাকারী), ভাড়ুয়া (পতিতাদের দালাল) ইত্যাদি।’ এছাড়া তিনি বিজেপি সাংসদ ও স্পিকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাহার ফেঁকো ইস মোল্লাকো’। তিনি আরও বলেন, ‘ইয়ে উগ্রবাদী হ্যায়, ইয়ে আতঙ্কবাদী হ্যায়’। রমেশ বিধুরী যে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির মনের কথা বলেছেন তা বোঝা যায় যখন কেউ তাঁকে রোখার চেষ্টা না করে বিজেপি সাংসদরা দন্ত বিকশিত করে হাসতে থাকেন। অবশ্য তাঁরা হাততালি দেননি, কিন্তু সশধে টেবিল চাপড়েছেন। আর দুই প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ এবং হর্ষবর্ধন সাংসদ বিধুরীর ঘৃনা ভাষণের সমর্থনে প্রাণ খুলে হাসতে থাকেন।
বোঝা যায়, এদের মনের মধ্যে তীব্র মুসলিম ও খ্রিস্টান বিদ্বেষ রয়েছে। নিজেরা হয়তো অনেক সময় দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে থাকেন! কিন্তু কেউ বললে তাঁকে ঢালাও সমর্থন দেন। তাই প্রকাশ্যে মুসলিম গণহত্যার আহ্বান জানালেও কারও কোনও শাস্তি হয় না। কয়েকটি রাজনৈতিক দল মহুয়া মৈত্র, অপরূপা পোদ্দার, অধীর রঞ্জন চৌধুরি, ডিএমকে-র কানিমোজি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা স্পিকারের কাছে বলেছেন, এই ধরনের কুৎসিত ভাষণ দেওয়ার জন্য রমেশ বিধুরীকে পার্লামেন্ট থেকে সাসপেন্ড করা হোক এবং সংসদের প্রিভিলেজ কমিটিতে বিষয়টি পাঠানো হোক।
কিন্তু স্পিকার ওম বিড়লা এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেননি। তবে এর থেকে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় বিরোধী দলের সাংসদ, নেতা প্রমুখদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। যার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। যে বিজেপি নেতারা দাঁত বের করে হেসে হেসে বিধুরীর প্রতি সমর্থন দিয়েছেন তাঁদেরকেও সাসপেন্ড করার দাবি উঠেছে। তাঁরা একই দোষে দোষী।
তবে সবথেকে মজার অবস্থান হচ্ছে রবিশঙ্কর প্রসাদের। পাঠক ও দর্শকদের মনে থাকতে পারে তিন তালাক নিষিদ্ধকরণের বিল আনার সময় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ পার্লামেন্টে ‘মুসলিম বোনেদের’ দুঃখে কেঁদে ভাসিয়েছেন। তাঁকে রুমাল দিয়ে বেশ কয়েকবার চোখ মুছতে হয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কান্নার স্রোতে তাঁর রুমাল জবজব করে ভিজে গিয়েছিল। সেই রবিশঙ্কর মুসলিমদের ‘আতঙ্কবাদী’, ‘ভাড়ুয়া’ এবং ‘কাটুয়া’ বলা রমেশ বিধুরীকে প্রকাশ্যে কিভাবে না সমর্থন করলেন!
তবে একটা কথা বোধহয় বিধুরী ঠিকই বলেছেন, হ্যাঁ, মুসলিম পুরুষরা ‘কাটুয়া’। কারণ, তাঁরা ছোটবেলাতেই লিঙ্গের চর্ম-মুখ হাজাম বা সার্জেন দ্বারা কেটে ফেলেন। এজন্যই রমেশ বিধুরী তাঁদের ‘কাটুয়া’ বলেছেন। এ কথা তো মুসলিম পুরুষরা অস্বীকার করতে পারবে না। অবশ্য রবিশঙ্করজিরা জানেন কি না জানা যায়নি, ইহুদিরাও খতনা করে থাকেন। যদিও ইসরাইল বিজেপির খাস দোস্ত! তাদের হয়তো দোষ হয় না! কে জানে এরপর হয়তো রবিশঙ্করজিরা নতুন পার্লামেন্টে বিল নিয়ে আসবেন, মুসলিম পুরুষরা খতনা করতে পারবে না! এটাও হয়তো তাঁরা তালাক বিলের মতোই পাশ করিয়ে নেবেন!
কিন্তু লিঙ্গের চর্মচ্ছেদ বা খতনা করার যে কি কি সুবিধা রয়েছে, তা ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বহুবার জানিয়েছেন। সেইসব জানলে হয়তো এই বুড়ো বয়সেও রবিশঙ্কর প্রসাদজিরা খতনা করার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন!
কিন্তু তাঁদের খতনা করার জন্য প্ররোচিত করলে হয়তো মামলাও হয়ে যেতে পারে। কারণ, ধর্মান্তরে প্ররোচিত করার অভিযোগে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে দেদার মামলা হচ্ছে। খতনার বিজ্ঞানসম্মত সুবিধা কি কি তা পরবর্তী কিস্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।