পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ প্রয়াত ভারতের প্রখ্যাত নারীবাদি লেখিকা, প্রশিক্ষক ও অধিকারকর্মী কমলা ভাসিন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। কমলা ভাসিনের প্রয়াণের খবর জানিয়ে ট্যুইট করেন স্থানীয় অধিকারকর্মী কবিতা শ্রীবাস্তব। কবিতা শ্রীবাস্তব আজ শনিবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় বন্ধু, কমলা ভাসিন, ২৫ সেপ্টেম্বর ৩টার দিকে মারা গেছেন। ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নারী অধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটি একটি অপূরণীয় ক্ষতি’। টুইটে শ্রীবাস্তব লিখেছেন, ‘তিনি পুরো জীবনটাকে উৎসর্গ করেছিলেন। কমলা, আপনি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’
শনিবার ভোররাতে মৃত্যু হয় কমলা ভাসিনের। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শনিবার ভোর তিনটে নাগাদ চিকিৎসকরা জানান মারা গেছেন কমলা ভাসিন।
একজন ফেমিনিস্ট হিসেবে কমলা ভাসিনকে চেনে দেশবাসী। যদিও নারীবাদী আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি একাধারে সমাজকর্মী, লেখিকা ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের দশক থেকে ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন কমলা ভাসিন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সতরঙ্গি লাড়কে’, ‘সতরঙ্গি লাড়কিয়া’ ইত্যাদি। ২০০২ সালে তিনি ‘সঙ্গত’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা প্রত্যন্ত ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে কাজ করে থাকে।
১৯৪৬ সালের ২৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ কমলা ভাসিন। দেশভাগের পর তাঁর পরিবার ভারতের রাজস্থানে চলে আসে। রাজস্থানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন ভাসিন। এরপর তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সমাজতত্ত্বে পড়াশোনা করেছিলেন। জার্মানির ফাউন্ডেশন ফর ডেভলপমেন্ট ওরিয়েন্টেশন কেন্দ্রে বেশ কিছুদিন কাজ করে কমলা দেশে ফিরে আসেন।
জেন্ডার তত্ত্ব, নারীবাদ ও পিতৃতন্ত্র নিয়ে বেশ কিছু বই লিখে গেছেন কমলা ভাসিন। এর পাশাপাশি লিঙ্গ তত্ত্ব, সমতা, মানবাধিকার, পুরুষতন্ত্র নিয়ে লেখা কমলার বইগুলি অন্তত ৩০ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কমলা ভাসিন প্রান্তিক আদিবাসী মহিলাদের প্রশিক্ষিত করার কাজ করতেন। গ্রামাঞ্চলে বড় হয়ে ওঠার জন্য, খুব সহজেই প্রান্তিক মহিলাদের সমস্যার কথা বুঝতেন। প্রায় গোটা জীবনটা দেশের প্রান্তিক মহিলাদের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। বিজ্ঞাপনী পণ্যতে নারীদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয় সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন কমলা। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় নারী আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি।