আইভি আদক,হাওড়া : প্রখ্যাত সুরকার ও গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওড়ার সালকিয়ার বাসভবন হেরিটেজ ঘোষণা করার প্রস্তাব তাঁর বাড়ির তরফে লিখিতভাবে জানানো হলে অবশ্যই সেই প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে বলে অনেক আগেই জানিয়েছিলেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি তৎকালীন সময়ে বলেছিলেন, পুলকবাবুর হাওড়ার বাড়ি হেরিটেজ ঘোষণা করার কথা থাকলেও ওনার পরিবারের তরফ থেকে যারা বাড়ির মালিক রয়েছেন তারা যতক্ষণ না চিঠি দিচ্ছেন এই ব্যাপারে আমরা হেরিটেজ কমিশনকে কোনরকম প্রস্তাব দিতে পারিনা। ওনার বাড়ি থেকে যদি হেরিটেজ এর জন্য আমাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয় তাহলে আমরা অবশ্যই সেই বিষয়টি হেরিটেজ কমিশনকে জানাব। কিন্তু, এরপর কেটে গিয়েছে মাঝে আরও তিন তিনটি বছর।
অরূপবাবুর আক্ষেপ ওনার পরিবার চাননি বলেই হেরিটেজ হিসেবে পুলকবাবুর বাড়ি ঘোষণা করা যায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় হাওড়ার শরৎ সদনে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওড়ার সালকিয়ার বসতবাড়িটি যাতে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা যায় তারজন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছিলাম। হেরিটেজ কমিশনের কাছে লিখিতভাবেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওনার পরিবারের সদস্যরা না চাইলে আমরা কি করতে পারি।
ওনার বাড়িতে মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট মানুষ এসেছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ওই এলাকার তৎকালীন বিধায়ক, বর্তমান বিধায়ক সকলে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওনার বাড়ি হেরিটেজ করার জন্য। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যরা যদি না চান আমরা কিছু করতে পারব না।” অরূপ রায় আরও বলেন, “পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় মানে শুধু স্মৃতিই স্মৃতি। ওনার সঙ্গীত, ওনার রচনা এটাই আমাদের কাছে স্মৃতি। এবং এই স্মৃতি আমরা চিরকাল বয়ে বেড়াব। চিরকাল আমাদের মনের মধ্যে থাকবে।
” বিধায়িকা নন্দিতা চৌধুরী বলেন, “একটা পরিবারের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে তো সাধারণ মানুষ ঢুকে যেতে পারে না। নিশ্চয়ই কিছু বিষয় আছে যার ফলে এই বাধা আছে। আমাদের অভিভাবক হিসেবে মন্ত্রী অরূপ রায় রয়েছেন। উনি যদি মনে করেন আমাদের সঙ্গে নিয়ে কিছু করতে চান তাহলে এই কালজয়ী শিল্পীর স্মৃতিতে আমরা সবদিক থেকেই চেষ্টা করব।” এদিন সন্ধ্যায় গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণে হাওড়ার শরৎ সদনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আরোহী’র আয়োজনে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ, গৌতম চৌধুরী, নন্দিতা চৌধুরী, পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারপার্সন ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী, ভাইস চেয়ারপার্সন সৈকত চৌধুরী, পুলকবাবুর পুত্র পিয়াল বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএফএ এর সহ সভাপতি শ্যামল মিত্র, অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থার পক্ষে অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, পরেশ মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা। এদিন সন্ধ্যায় সঙ্গীতে অংশ নেন শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরী, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’, ‘আজ মন চেয়েছে’, ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না’, “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল”, “গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি”, “নিঝুম সন্ধ্যায় ক্লান্ত পাখিরা”, “খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার” প্রমুখ অজস্র বাংলা ছায়াছবির বহু স্মরণীয় গানের যিনি স্রষ্টা সেই ভারত বিখ্যাত গীতিকার সুরকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণে এদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।