ডায়েট করা বলতে যারা শুধু শসা– টক দই আর ওটস চিবনো বোঝেন– তাঁদের চিন্তাভাবনা পাল্টানোর সময় এসে গেছে। মাছ– মাংস– ডিম– চিজ খেলেও চটজলদি ওজন কমবে– এমন ডায়েটেরও খোঁজ পাওয়া গেছে। খাদ্যরসিক লোকেরা যেন এমন ডায়েটেরই অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক এই কারণেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল কিটো ডায়েট। এই ডায়েট সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিটো ডায়েট বলতে ঠিক কী বোঝায়?
কিটোজেনিক ডায়েট বা সংক্ষেপে কিটো ডায়েটের বিশেষত্ব হল– লো কার্ব হাই ফ্যাট অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট কম আর ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি করে রাখতে হবে। খেতে হবে প্রোটিন জাতীয় খাবারও। আসলে কিটোসিস হল এমন এক পদ্ধতি যেখানে এনার্জি বার্ন করার জন্য শরীরে যথেষ্ট কার্বোহাইড্রেট থাকে না। ফলে প্রচুর ফ্যাট বার্ন হয়। আর এতেই দ্রুত ওজন কমে। কিটোসিস থেকেই কিটো নাম এসেছে। এই ডায়েটে যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে চিনি– হোয়াইট ব্রেড– সোডাযুক্ত খাবার ও বেকারির খাবার। তাই কিটোজেনিক ডায়েটে ৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট– ৭০ শতাংশ ফ্যাট আর ২৫ শতাংশ প্রোটিন রাখা দরকার।
কিটো ডায়েট করলে কী কী খাওয়া যাবে?
ডিম– ফুল ফ্যাট– ক্রিম– চিজ– সল্টেড বাটার– গ্রিলড চিকেন– চিকেনের ঝোল– মাটন– আমন্ড– কাজুবাদাম, শাকসবজির মধ্যে নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে পালং শাক– লেটুস– ব্রকোলি– বেল পেপার– বাঁধাকপি– ফুলকপি এমনকী মাশরুমও। আর রান্না করার সময় মাখন কিংবা অলিভ অয়েলে করা দরকার।
ওজন কমানো ছাড়া আর কি কোনও উপকার করে?
হার্ট সুরক্ষিত রাখে কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়ার জন্য শরীরে একদিকে ভাল কোলেস্টেরল বা এইচ ডি এলের মাত্রা বাড়ে অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএলের মাত্রা কমে। শুধু তাই নয়– ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতেও সাহায্য করে। ফলে হার্ট থাকে সুরক্ষিত।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য লো কার্ব বা কম কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের কোনও বিকল্প নেই।
ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। অনেক কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর হাত থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেলে।
মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধ করে মেটাবলিক সিনড্রোম হল কয়েকটি অবস্থার সমষ্টি যা একসঙ্গে হৃদরোগ– স্ট্রোক এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে লো কার্ব ডায়েট।
কী কী খাওয়া যাবে না
যে কোনও দানাশষ্য– ডালিয়া– ভুট্টা– নুডলস– গম– কলা– আম– আপেল– সন্দেশ– কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি খাওয়া চলবে না। এছাড়া মাটির নীচের সবজি যেমন আলু– মুলো কিংবা গাজরও খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
এর কি কোনও সাইড এফেক্টস আছে?
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এমন ডায়েট করা দরকার। নাহলে একাধিক শারীরিক সমস্যা যেমন– অনিদ্রা– খিদে বেড়ে যাওয়া– মাথা যন্ত্রণা বা মাথা ঘোরা– ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। বেশিদিন এই ডায়েট করলে মৃগী পর্যন্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে কখনওই এই ডায়েট করা চলবে না। সাধারণত ১০ থেকে ২১ দিনেই ওজনের হেরফের লক্ষ করা যায়। তবে একটানা এক দেড় মাসের বেশি সময় এই ডায়েট করা উচিত নয়।