পারিজাত মোল্লা: ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন ববিতা সরকার। এবার নতুন এক দাবি নিয়ে মামলা তাঁর। হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই ববিতা চাকরি পেয়েছিলেন এবং তাঁর নির্দেশেই চাকরি হারিয়েছেন ববিতা। তাই এবার তাঁর এজলাসেই নতুন মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
ববিতা সরকার হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের রিপোর্টে অনেক ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছিল বলে উল্লেখ ছিল। তাঁর বিশ্বাস, এখনও অনেকেই এমন আছেন যাদের ওএমআর শিট বিকৃত কিন্তু তারা চাকরি করছেন’। এক্ষেত্রেই তাঁর দাবি, ‘তাদের চাকরি বাতিল হলে তিনি পুনরায় চাকরি পেতে পারেন’। এই দাবিতেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। শুক্রবার এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ববিতা রেজাল্ট -এর শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখিয়েছিলেন। এর ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। এর পর সেই মামলা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে গেলে তিনি ববিতার চাকরি বাতিল করেন। চাকরি বাতিল হলে শিলিগুড়িরই বাসিন্দা অনামিকা ববিতার চাকরি পান। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি ববিতা সরকার। তাই ফের আরও একবার কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন তিনি।ববিতার মামলায় এসএসসি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।
এদিন বিচারপতি জানান, -‘ এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশমের বিকৃত ওএমআর শিট প্রকাশিত করেছে আগেই, এবার একাদশ-দ্বাদশেরও বিকৃত ওএমআর শিট প্রকাশ হোক’, চায় হাইকোর্ট।
একাদশ-দ্বাদশের বিকৃত ওএমআর শিট প্রকাশ নিয়ে এসএসসি -কে তাদের অবস্থান জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার অবস্থান জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসএসসি-কে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বিস্তারিত মেধাতালিকা প্রকাশ চেয়ে মামলা করেন ববিতা সরকার। তাঁর আইনজীবী ফিরদৌস সামিম জানিয়েছেন , -‘ ২০১৬ সালের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৫ হাজার ৫০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ৯০৭টি বিকৃত উত্তরপত্র উদ্ধার করে সিবিআই। তার মধ্যে ১৩৮ জন ছিলেন ওয়েটিং লিস্টে’।
মামলাকারী ববিতার আর্জি , -‘একাদশ-দ্বাদশের বিস্তারিত তথ্য-সহ প্যানেল প্রকাশ পেলে কারা, কী ভাবে, কোথায় চাকরি পেয়েছেন, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম ২০ জনের মধ্যে দুর্নীতির কারণে কেউ চাকরি পেয়ে থাকেন, তবে তাঁর শিক্ষিকা হওয়ার আবার সুযোগ আসবে’।
তাই প্যানেল প্রকাশ করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এর আগে ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই চাকরি দেওয়া হয় অনামিকা রায়কে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একদা শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী এই পদে চাকরি পেয়েছিলেন।
অঙ্কিতার চাকরি পেয়েছিলেন ববিতা পরে সেই ববিতার চাকরি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ, এসএসসি অ্যাকাডেমিক স্কোরে ববিতাকে ২ নম্বর বেশি দিয়েছে। তাই বেশ কয়েকজন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে টপকে তিনি নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এমনকী হাইকোর্টে কমিশনের দেওয়া তথ্যতেও সেই কথা উল্লেখ ছিল। তাতেই দেখা গিয়েছিল ববিতা সরকার অ্যাকাডেমিক স্কোরে ৩৩ পেয়েছেন। যদিও ববিতার ৩১ পাওয়ার কথা।
কারণ, স্নাতক স্তরে তিনি ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, এই ভিত্তিতে প্রাপ্ত নম্বর বসিয়েছে এসএসসি। অতিরিক্ত নাম্বার দেখানোর ফলে চাকরি হারান ববিতা। সেই চাকরি পান শিলিগুড়ির অনামিকা রায় নামে অন্য এক চাকরিপ্রার্থী। ইতিমধ্যেই সিঙ্গেল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশিকা কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছেন ববিতা। তার মাঝেই সিঙ্গেল বেঞ্চের দারস্থ হয়েছেন ববিতা নুতন অন্য দাবি নিয়ে।একাদশ -দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষায় ওএমআর শিট প্রকাশ করার আবেদন তাঁর। এদিন বিচারপতি এসএসসি কে তাদের অবস্থান জানাতে বলেছেন আজ অর্থাৎ শুক্রবারের মধ্যে। আজই এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।