পারিজাত মোল্লাঃ জেলা পুলিশের হাত থেকে মামলা গেল সিআইডির হাতে।কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতির নির্দেশে এই তদন্তকারী সংস্থা বদল।আদালত সুত্রে প্রকাশ, সরকারি জমিতে চায়ের দোকান খুলেছিলেন উলুবেড়িয়ার এক ব্যক্তি। অভিযোগ, তারপরই তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর দোকান সরানোর চাপ দিতে শুরু করে কয়েকজন। এমনকী তাঁর নাবালিকা মেয়েকে গণধর্ষণ করার অভিযোগও ওঠে। সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি।মেয়ে ও স্বামীর এমন পরিণতি দেখে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে পুলিশকে তীব্র ভর্ত্সনা করেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। সেইসঙ্গে ঘটনার তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেয় সিঙ্গেল বেঞ্চ। জানা গেছে, উলুবেড়িয়া একটি সরকারি জমিতে রুটিরুজির জন্য চায়ের দোকান খুলেছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। পরিবারের সকলেই দিনরাত এক করে খাটাখাটনি করতেন। কিন্তু দিন কয়েক পর থেকেই এলাকার কয়েকজন দুষ্কৃতী চড়াও হয় তাঁদের দোকানে।
অভিযোগ, দোকান সরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে তারা।এমনকী ওই ব্যক্তির মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। মামলাকারীর অভিযোগ, -‘ স্থানীয় থানার পুলিশের কাছে গিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। সামাজিক চাপে পড়ে তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ঠিকই, কিন্তু মূল অভিযুক্ত এখনও এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে’। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে এই মামলায় শুনানি চলে ।
বিচারপ নির্দেশেই এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন উলুবেড়িয়া থানার আইসি রামেশ্বর ওঝা ও মামলার আইও। শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।মামলাকারী এদিন আদালতে জানান, -‘ মূল অভিযুক্ত একরামুলকে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করেনি। সে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, হুমকিও দিচ্ছে’। সেই অভিযোগ শুনে বিচারপতি পুলিশের কাছে জানতে চান, ‘অভিযুক্তকে ধরতে কতবার তল্লাশি হয়েছে?
কী কী চেষ্টা করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত কি খুব প্রভাবশালী?’রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, -‘এই ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। মামলাকারীর বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। তিনি সরকারের জায়গায় থাকা দোকান বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষ গণস্বাক্ষর জমা দিয়েছেন’।তারপরই বিচারপতি বলেন, ‘আদালত নির্যাতিতার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত। এছাড়া আর কিছু ভাবতে চাইছে না কোর্ট।
সরকারি জায়গা বিক্রি করেছে আমি মেনে নিলাম। কিন্তু তাতে কি তাদের পরিবারকে ধর্ষণের অধিকার জন্মে যায়?’ বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এদিন আরও বলেন, ‘একটা ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে দোকান বিক্রি সংক্রান্ত লেখা দেখেই কোর্ট বুঝতে পারছে কী করে কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়া একজনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। নির্যাতিতার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। রাজ্যের দেওয়া তদন্ত রিপোর্ট ও কেস ডাইরি দেখে আদালত মনে করছে পুলিশ কিছু নথি দেখে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে।
যার জন্য পুলিশ গণধর্ষণের অভিযোগও মানতে চাইছে না। এখানে মাস পিটিশনের সঙ্গে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারের তথ্য দেখে পুলিশ তাতেই মান্যতা দিয়েছে।’এরপরই বিচারপতি বললেন, ‘আদালত নিশ্চিত পুলিশ মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ। এটা রাজ্যের ব্যর্থতা। তাই সিআইডিকে তদন্ত হস্তান্তর করা হল।’ নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, -‘সশস্ত্র পুলিশ নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তা দেবে’।এখন দেখার মূল অভিযুক্ত কে গ্রেপ্তারে সফল হয় কিনা সিআইডি?