পারিজাত মোল্লা: কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে উঠে মুর্শিদাবাদে শিক্ষক জালিয়াতি মামলাটি।সিআইডির ক্রমাগত অগ্রগতি রিপোর্ট দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি। মুর্শিদাবাদের সুতি এলাকার গোথা হাইস্কুলের শিক্ষক অনিমেষ তিওয়ারি ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন । তাঁর মতো আর ক’জন শিক্ষক মিথ্যে নথি জমা দিয়ে চাকরি করছে ? এর সন্ধানে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করল কলকাতা হাইকোর্ট । শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিশেষ কমিটি গড়ল আদালত ।
মুর্শিদাবাদের গোথা হাইস্কুলের ভুয়ো শিক্ষক অনিমেষ তিওয়ারির মতো আর কতজন ভুয়ো শিক্ষক চাকরি করছেন? তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি ।শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম খুঁজে বের করবেও কমিটির সদস্যরা । আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রয়েছে বলে জানা গেছে । কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের গঠিত এই নতুন কমিটিতে রয়েছেন- স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব এবং শিক্ষা দফতরের সচিব ।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু নির্দেশ দেন,-‘ স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব এবং শিক্ষা দফতরের সচিব নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে অনিয়ম এবং বেআইনি কাজ, দুর্নীতি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করবেন । ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি আদালতের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে’। এদিন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর নির্দেশে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন সিআইডির ডিআইজি । রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বেআইনি নিয়োগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পেশ করেন তিনি । দাখিল রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হন বিচারপতি । এই নিয়ে ষষ্ঠ রিপোর্ট পেশ করেছে সিআইডি ।টানা ৬ টি ধারাবাহিক রিপোর্টের পরও অখুশি বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু ।
রিপোর্ট প্রসঙ্গে বিচারপতি এদিন বলেন, ” ৬টি রিপোর্ট দেখে কোথাও বোঝা যাচ্ছে না, এই দুর্নীতির কার্যপদ্ধতি কী ? কোন প্রণালীতে পরিকল্পনা করে এই দুর্নীতিকে বাস্তবায়িত করা হয়েছিল, তার উল্লেখ এই রিপোর্টগুলিতে নেই ।” তিনি আরও জানান,-” ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্নীতি ঠেকানো যায়, তার জন্য কী করা উচিত তার উল্লেখও এই রিপোর্টে নেই ‘। এরপর এজলাসে বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর প্রশ্ন, – “এই ধরনের রিপোর্টের কি আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে ?” ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আদালত সিআইডির উপর অগাধ আস্থা রেখেছিল । কিন্তু তারপর এই রিপোর্ট ? আর কোনও অনিমেষ তিওয়ারি আছে কি না? সেটা আমি দেখতে চাই ।” অনিমেষ তিওয়ারি যে বিএড সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন, সেই কলেজ থেকেই তিনি আদৌ বিএড করেছিলেন কি ? এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার দরকার,’ তা জানিয়েছেন বিচারপতি ।
মুর্শিদাবাদের গোথা এআর হাইস্কুলে নথি জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছিলেন অনিমেষ তিওয়ারি । তাঁর বাবা ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক । আদালতের নির্দেশে মামলাটি যায় সিআইডির হাতে । সিআইডিকে নতুন রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । সিআইডির আধিকারিকদের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ফের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ ।এমনকী কলকাতা হাইকোর্টে ডিআইজি-সিআইডিকে তলবও করেছিলেন।
ডিআইজি (সিআইডি). বিচারপতি বসুর এজলাসে উপস্থিত হয়ে ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট পেশ করেন। সেই রিপোর্ট ঘিরেই একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি।মুর্শিদাবাদের গোথা এয়ার স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন অনিমেষ তিওয়ারি। অভিযোগ ছিল, সুপারিশপত্র মেমো নকল করে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। অনিমেষের বাবা আবার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাবাই ছেলেকে ‘ভুয়ো’ নথি করিয়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় ডিআইজি-সিআইডির নেতৃত্বে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত । কিন্তু তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে অসন্তুষ্ট বিচারপতি বসু।