মোল্লা জসিমউদ্দিন: একগুচ্ছ শর্ত আরোপ করে আইএসএফ নেতৃত্ব কে আগামী ২১ শে জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাস এই অনুমতি দেয়। আগামী ২১ জানুয়ারি ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে আইএসএফ-এর সভার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শর্তসাপেক্ষে সভার অনুমতি দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। ২০ ফুট বাই ২০ ফুট মঞ্চ হতে হবে। ১০০০ বেশি জমায়েত নয়।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ।শর্তগুলো হলো – সভায় এক হাজারের বেশি লোকের জমায়েত করা যাবে না। লম্বা এবং চওড়ায় ২০ ফুটের বেশি মঞ্চ করা যাবে না। বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত কর্মসূচি করা যাবে। কোনও আপত্তিকর বা উস্কানিমূলক মন্তব্য করা যাবে না। আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবী রাখতে হবে। যান চলাচলে বাধা তৈরি করা যাবে না।
গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা ছেড়ে রাখতে হবে।পুলিশ এবং অয়োজকদের ভিডিওগ্রাফি করতে হবে। রাজ্যকে পর্যাপ্ত পুলিশের বন্দোবস্ত করতে হবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ করা যাবে না।এদিনও আদালতে গত বছর ২১ জানুয়ারির কথা মনে করিয়ে বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন রাজ্যের আইনজীবী।
মনে করান, কীভাবে সেদিন ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলের সামনে হিংসা ছড়িয়েছিল। এবারও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।আগামী ২১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা দিবসে ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করার অনুমতি চেয়ে কলকাতা পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল আইএসএফ। পুলিশ সেই আবেদন খারিজ করে দিলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তারা।
সেখান থেকে শর্তসাপেক্ষে সভার অনুমতি পেল নওশাদ সিদ্দিকীদের দল। গত শুনানি পর্বে এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি বলেছিলেন -‘ অন্য দল সভা করতে পারলে আইএসএফ কেন নয়?’ সমর্থক কমিয়ে, পুলিশ বাড়িয়ে ওখানেই হোক সভা। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল আইএসএফ সমর্থকদের অতীতের ভূমিকা।
গত বছর রানি রাসমণি রোডের সভায় গন্ডগোলের এবং পুলিশকে মারধরের অভিযোগ নিয়ে সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি ।গত শুনানি পর্বে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানতে চেয়েছিল -‘ গত বছর কী ঘটেছিল? এবং কেন ঘটেছিল? তার ব্যাখ্যা দিতে হবে আইএসএফ-কে’।
এরপর মামলাকারীর আইনজীবীকে বিচারপতি বলেন -‘ তৃণমূল বা অন্যান্য দল সভা করে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে গন্ডগোলের অভিযোগ ওঠে না। কেউ উস্কানি দিতে পারে, কিন্তু নিজের সমর্থকদের আটকানো কার কাজ?’ ওই জায়গায় সভা করতে বারণ করছে না আদালত। কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করুক আইএসএফ। সমর্থক নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নিজেরাই বিধিনিষেধ আরোপ করুক দল। পরামর্শ সিঙ্গেল বেঞ্চের। তবে রাজ্য জানিয়েছিল -‘ ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে থেকে সরিয়ে অন্যত্র করা হোক সভা’।
ধর্মতলার মোড়ে ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে প্রতিবছর ২১ জুলাই শহিদ সমাবেশ করে তৃণমূল। ঠিক সেই জায়গাতেই ২১ জানুয়ারি সভা করার অনুমতি চায় আব্বাস ও নওসাদ সিদ্দিকির আইএসএফ। রাজ্য পুলিশ তাতে সম্মতি দেয়নি। কারণ, পুলিশের যুক্তি গত বছর আইএসএফের রানি রাসমণি রোডের সভায় অশান্তি হয়েছিল।এর আগে ধর্মতলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সভা করতে চেয়ে পুলিশের কাছে বাধা পেয়েছিল বিজেপি। তার পর শুভেন্দু অধিকারীরা তা নিয়ে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন।
সেই মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, -‘ ওখানে সভা করা নিয়ে দ্বিচারিতা কেন? বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, -‘ তাহলে কি ওখানে তৃণমূলের সভাও বন্ধ দেব?’ এ কথা বলে বিজেপিকে ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করার অনুমতি দেয় কলকাতা হাইকোট। তিন বছর আগে ২১শে জানুয়ারি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট গঠন করেছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। এবার প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁরা ধর্মতলার মোড়ে সভা করতে চেয়ে অনুমতি চেয়েছিলেন হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশের যুক্তি গত বছর রানি রাসমণি রোডে আইএসএফের সভায় অশান্তি হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হয়েছিল। তাই আপত্তি করা হয়েছে।একথা জেনে গত শুনানি পর্বে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেছিলেন, -‘ সভার স্থান পরিবর্তন করতে এখনই বলা হচ্ছে না। তবে গতবারের ঝামেলা থেকে বিরত থাকতে আইএসএফ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? সে ব্যাপারে তাদের আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে। তা ছাড়া পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কতটা নিরাপত্তা দেওয়া যেতে পারে তা নিয়েও পুলিশকে রিপোর্ট দিতে হবে’।বৃহস্পতিবার একগুচ্ছ শর্ত আরোপ করে আইএসএফ কে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ।