পুবের কলম প্রতিবেদক: ‘মালদা থেকে পিতামাতার সঙ্গে যাত্রাকারী সায়ন্তিকার সঙ্গে দেখা করে আমি আনন্দিত। সে ও তার বোনেরা রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী এবং সবুজসাথীর মতো বেশ কয়েকটি প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছেন। তার মতো অল্পবয়সী মেয়েরা বাংলাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং আমাদের অবশ্যই তাদের লালন-পালন করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের সমস্ত স্বপ্ন সত্যি হবে। আমি তার ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গল কামনা করি।’
ফেসবুকে ঠিক এই কথাগুলি লিখে ৮ বছরের সায়ন্তিকাকে শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সায়ন্তিকার দুই দিদি আজ পড়াশুনা করছেন মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে। তাঁদের পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কন্যাশ্রী ও সবুজসাথীর কল্যাণে আজ তাঁরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই অবদানের কথা স্মরণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাতে সাইকেল চালিয়ে মালদহ থেকে কলকাতার কালীঘাটে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে ৮ বছরের ছোট্ট সায়ন্তিকা।
কিন্তু এত ছোট বয়সে কীভাবে সাইকেল চালিয়ে সুদূর কলকাতার কালীঘাটে যাবে খুদে পড়ুয়া? তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। গোটা বিষয়টি জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে যোগাযোগ করা হয় মালদহের জেলা শাসকের সঙ্গে। শেষমেষ মালদহ জেলা প্রশাসন গৌড় এক্সপ্রেসে টিকিট কেটে দেয় সায়ন্তিকার৷ সঙ্গে যদিও সাইকেল ছিল। তবে বিতর্ক এড়িয়ে শুরু থেকেই ছোট মেয়ের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর হাতে তুলে দেয় মালদহের বিখ্যাত আমসত্ত্ব। সায়ন্তিকাকেও উপহার দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহ জেলার ইংরেজবাজার পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মনস্কামনা পল্লীতে বাড়ি সায়ন্তিকার। সায়ন্তিকার স্বপ্নপূরণ হয় বৃহস্পতিবার। এদিন সকালে কালীঘাটে পৌঁছে যায় সায়ন্তিকা। সঙ্গে আমসত্ত্ব। ছোট্ট সায়ন্তিকাকে কাছে পেয়ে বেজায় খুশি হন মুখ্যমন্ত্রীও। পাল্টা সায়ন্তিকার হাতে তুলে দেন উপহার।
বৃহস্পতিবার সকালেই গৌড় এক্সপ্রেসে চেপে শিয়ালদহ স্টেশনে আসেন সায়ন্তিকা। সেখান থেকেই সাইকেল চালিয়ে সোজা কালীঘাটের বাড়িতে আসে খুদে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে আমসত্ত্ব তুলে দেয় খুঁদে পড়ুয়া সায়ন্তিকা।
সায়ন্তিকার মা উমা দাসের বলেন, আমার স্বামী পেশায় গাড়িচালক। সংসারে অনটন আছে। দুই মেয়ের পড়াশোনাও হয়ত বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী প্রকল্পের কারণে বন্ধ হয়নি। সায়ন্তিকা ছোটবেলায় সেই সমস্যাটা দেখেছে। ছোট হলেও ও বুঝেছে ব্যাপারটা। ও মমতাদিকে খুব ভালবাসে। আমার নিজের পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাপের বাড়ির অবস্থা ভালো না থাকায় পড়াশোনা বেশিদূর টানতে পারেনি। বিয়েও হয়ে গিয়েছিল তাড়াতাড়ি। ও টিভিতে দেখেছিল মমতাদি মালদহে এসে আমসত্ত্ব খেতে চেয়েছিলেন। তারপরেই জেদ ধরে ও সাইকেল চালিয়ে মমতাদিকে আমসত্ত্ব খাইয়ে আসবে। আমরা তাতে বাধা দিতে চাই না।’
আর সেই আমসত্ত্ব নিয়ে অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এল সায়ন্তিকা।