পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দরজায় কড়া নাড়ছে ২৫ ডিসেম্বর। আর বড়দিন মানেই পার্কস্ট্রিটের রোশনাই। করোনা বিধি মেনে পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে শুরু হয়ে গেল সেই উৎসব। এই উৎসবের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিবছরের মতো এবারে এই বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পার্কে উৎসবের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জেলায় জেলায় বড়দিনের উৎসব পালিত হবে। তার জন্য সবাইকে অভিনন্দন। ব্যাণ্ডেল থেকে ঝাড়্গ্রাম সেজে উঠবে। সব উৎসবই আমাদের উৎসব। প্রত্যেকবারের মতো আমি চার্চে যাব। আপনারাও আপনাদের সুবিধা মতো চার্চে যাবেন’।
চলতি বছর থেকে পার্ক স্ট্রিটের ক্রিসমাস কার্নিভালে যুক্ত হতে চলেছে বো-ব্যারাকও। গত বছরই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতবার ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় তিনি আচমকা পৌঁছে গিয়েছিলেন বো ব্যারাকে।
মূলত বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতেই বো ব্যারাকের দুয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর সফর। আলোর মালায় সেজে ওঠা বো-ব্যারাকের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছুটা সময় কাটান স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে।
আলাপচারিতা, বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি খোদ মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাড়ায় আসায় আপ্লুত ছিলেন বো ব্যারাকের বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান সেখানকার বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা আবেদন জানিয়েছিলেন, উৎসবের দিনে তাঁদের পাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর আসা এটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় বড়দিনের উপহার। উৎসবের দিনে এখানকার নাগরিকদের পাশে থাকার বার্তাও দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তাঁর ঘোষণা ছিল, চলতি বছর থেকেই পার্ক স্ট্রিটের অ্যালান পার্কে তাঁর হাত ধরে বড়দিন উৎসবের সূচনা হওয়া ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালে যুক্ত করা হবে বো-ব্যারাককেও।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা শুনে উচ্ছ্বসিত নাগরিকরা ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কার্নিভালে যাতে বো- ব্যারাককেও চলতি বছর থেকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে ব্যাপারে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে জনসমক্ষে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্ক স্ট্রিটের পাশাপাশি এখনও বড়দিনের উৎসবের আবহ রয়েছে বো ব্যারাকেও। আলোর মালায় সেজে রয়েছে গোটা মহল্লা।
রাস্তার ওপর বিশাল ক্রিসমাস ট্রি থেকে শুরু করে হরেকরকম রঙিন কারুকার্য। অ্যাংলো পাড়ায় রয়েছে সবকিছুই। কলকাতার সাহেব পাড়ার পর সবচেয়ে বড় করে বড়দিনের উৎসব পালিত হয় এই অ্যাংলো পাড়ায়। তবে করোনা আবহে বিগত বছরে উৎসবের আনন্দ খানিকটা ফিকে হলেও চলতি বছরে নিজস্ব আভিজাত্যে আজও ঝলমলে বো- ব্যারাক।
চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে বউবাজার থানার পিছনের গলি দিয়ে খানিক এগোলেই সেই আয়তকার চাতাল। লাল ইটের পাঁজর নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। যার পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ ৮০ বছরের ইতিহাস।
শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলে আমেরিকান সৈন্যদের জন্যই এই ব্যারাকের পত্তন। কলকাতার বুকে এ এক অন্য কলকাতা। আয়তকার এই চাতাল ডিসুজা, ডিরোজিও, ক্রিস্টোফার অগাস্টিনের মহল্লা। এখানে ৩২টি পরিবারের বসবাস।
ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, রং-বেরঙের বেলুন আর আলোর রোশনাইয়ে সেজেছে মহল্লা। প্রায় আশি বছরের ক্ষয়িষ্ণু ইতিহাস বুকে নিয়ে আজও অমলিন বো-ব্যারাকের বড়দিন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় চলতি বছর থেকেই বড়দিনের উৎসব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে বো-ব্যারাকও। সেই বড়দিনের অপেক্ষারই এখন প্রহর গুনছে বো-ব্যারাক।