সেখ কুতুবউদ্দিন: পড়ানোয় তেমন মন নেই কারণ একটাই, বাড়ি থেকে বহু দূরে করতে হচ্ছে শিক্ষকতা। এমন মন্তব্যও করতে দেখা গিয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এদিকে শিক্ষক বদলির জন্য আবেদনও করেছেন অনেকেই। আবার শিক্ষকদের অনেকে বদলি হলেও পুনরায় আবেদন করতেও দেখা গিয়েছে।
কারণ মাদ্রাসার সংখ্যা কম, তাই কাছের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিলছে না চাকরির সুযোগ। মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে যতটা না আন্তরিক, শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে এবার যথেষ্ট খেয়াল রাখছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এবং তা প্রমাণিত হলে বদলি করে দেওয়ার আইন এনেছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন।
অধিকাংশ শিক্ষকরা শহরের আশপাশে বা বাড়ির কাছে আসতে চাইছেন। যা আবেদন পড়েছে, সব শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে কীভাবে কাছের মাদ্রাসায় দেওয়া সম্ভব, এই নিয়ে ঘুম কেড়েছে কমিশনের। কমিশনের সেক্রেটারি বা চেয়ারম্যান কিছু বলতে না চাইলেও জেলা স্কুল পরিদর্শকদের চিঠি দিয়ে বদলির আবেদনপ্রার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মাoাসা সার্ভিস কমিশন (এমএসসি)। কমিশন জানতে চেয়েছে, যাঁরা পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করেছেন, তাঁদের তথ্য কমিশনের অফিসে পাঠাতে হবে ডিআইদের।
এদিকে, অনলাইনে শিক্ষক বদলি হলেও ২৫ জন ‘টিচার’ নির্ধারিত মাদ্রাসায় নিযুক্ত হতে পারেননি। একাধিকবার বিভিন্ন দফতরে দরবার করলেও বদলি হয়নি তাঁদের। ওই শিক্ষকদের বিষয়ে কমিশন জানিয়েছে, পরবর্তী বদলির সময় তাঁদের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এ দিকে মাদ্রাসার মিটির মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষকদের তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মতো ৭০০ -এর বেশি কমিটি-নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকা তথ্য জমা দিয়েছে সুপ্রিম-কমিশনের কাছে। জমা দেওয়া তথ্যগুলি খতিয়ে দেখে তা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জমা দিয়েছেন।
অনেকের প্রশ্ন, ২৫টি শূন্যপদ কমিশনের কাছে থাকলেও ওই আসনগুলি পরিচালন সমিতি পূরণ করে রেখেছে । বদলি নিয়ে পাঠানো ওই শিক্ষকদের নির্ধারিত মাদ্রাসায় নিযুক্ত করতে দেওয়া হয়নি।
দেখা যাচ্ছে, এ’ন যদি শিক্ষক বদলি শুরু হয়। তা হলে কমিটির মাধ্যমে নিযুক্ত প্রায় এক হাজার আসনে শিক্ষক বদলি কীভাবে করা সম্ভব হবে। কারণ, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ওই আসনগুলি শূন্য দেখালেও কমিটি নিযুক্ত শিক্ষকরা ভর্তি করে রেখেছে । সুপ্রিম-কমিটির মাধ্যমে নিযুক্ত ওই শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান না করলে কীভাবে বদলি প্রক্রিয়া শুরু হবে। কমিশনের শিক্ষক বদলির এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি ‘আইওয়াশ’ বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ।
এদিকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, কমিশন বলেছে, যাঁরা আগে আবেদন করেছে, অথচ বদলি পায়নি। তাঁদের এ’ন বদলির আবেদনের প্রয়োজন নেই। একই সঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, আগে যাঁরা আবেদন করেননি, তাঁরা ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। আর এতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
উল্লেখ্য, স্কুলে ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে সময়োপযোগী উৎসশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছে। সেদিক থেকে বলতে ২০১০ সালের নিয়ম মাদ্রাসার জন্য প্রায় দেড় দশকের পরও বহাল থাকলো। একাংশের অভিযোগ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবসময়ই অবহেলা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের স্বীকার। সদূর ৮৫০ কিমি দূরবর্তী শিক্ষিকাদের গত কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন নতুন নিয়মাবলী আশ্বাসই দিয়ে গেলো।
এই ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় কোনও সুফল মিলবে না অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ ও ট্রান্সফারের বিষয়টি যাতে সহানুভূতির সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখেন, তার আর্জি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লি’ছেন, বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রতিশ্রুতিই সার হচ্ছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। আবার যাঁরা প্রকৃত প্রাপ্য, হাজারবার দরবার করেও বদলি পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। তবে শিক্ষক বদলি ও নিয়োগ নিয়ে কোনও কিছু বলতে চায়নি মাদ্রাসায় সার্ভিস কমিশন।