পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: তারিখ পে তারিখ। সানি দেওল নন, এই কথা এবার শোনা গেল দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কণ্ঠে। আদালতে বিচার মানেই দীর্ঘসূত্রতা, ‘তারিখ পে তারিখ’। অভিনেতা সানি দেওয়ালের বিখ্যাত সংলাপের মতো সাধারণ মানুষ এমনটাই ভাবেন। ঠিক এই ‘গড়িমসি’র কারণেই অনেকে ন্যায়বিচার পান না সময়মতো। ইনসাফের আশায় আদালত চত্বরে ঘুরতে ঘুরতে ক্ষয় হয় জুতোর তলা। দেশে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হয়েছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই। আদালতের শুনানিও হচ্ছে অনলাইনে। এই প্রেক্ষিতে কাজে আরও গতি আসার কথা। কিন্তু এখনও ‘আঠারো মাসে বছর’ হচ্ছে বিচারালয়গুলির কাজকর্মে। এ নিয়ে সরব হলেন দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। বিশেষ করে আইনজীবীরা নতুন মামলাগুলিতে বারবার ‘তারিখ পে তারিখ’ চেয়ে আবেদন করেন। তাদের হাতে বেশি মামলা থাকলে কিংবা কালক্ষেপণ করতেই অনেক সময় বিচারপতির কাছে ‘সময়’ চেয়ে নেন তারা। মুলতুবি হয় শুনানি। এতে দীর্ঘ হয় বিচারপ্রক্রিয়া। বিচারব্যবস্থার এই ঢিলেমি দূর করতে চান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। শুক্রবার তিনি বলেন, আইনজীবীরা নতুন মামলায় বারবার মুলতুবি চেয়ে আবেদন না করলেই ভালো। আমি চাই না সুপ্রিম কোর্ট ‘তারিখ পে তারিখ’ কোর্ট হয়ে উঠুক।
সুপ্রিম কোর্টে গত দু-মাসে ৩৬৮৮টি মামলায় মুলতুবির আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। গড়ে দেড়শোটির উপর মামলা মুলতুবির আবেদন আসে আইনজীবীদের কাছ থেকে। ৩ নভেম্বর অর্থাৎ শুক্রবারই ১৭৮টি মুলতুবি স্লিপ এসেছে। এভাবে চললে আদালতে আসতেই ভয় পাবে সাধারণ মানুষ, ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। আর তাতে হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বলিউডি সিনেমা ‘দামিনী’র বিখ্যাত সংলাপটি। নব্বইয়ের দশকে রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে দামিনীর চোখের সামনে তার দেবর ও বন্ধুরা মিলে ধর্ষণ করেছিল বাড়ির পরিচারিকারিকে। প্রভাবশালী শ্বশুর তার ছেলেকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। অপরদিকে গৃহবধূ হয়েও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দামিনী। অ্যাডভোকেটের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সানি দেওল। আদালতের দীর্ঘসূত্রতা, প্রভাবশালীদের কথায় চলা ও গড়িমসি নিয়ে গর্জে উঠেছিলেন দেওল। জনপ্রিয় হয়েছিল ‘তারিখ পে তারিখ’ সংলাপ। ৩০ বছর পরও দেশের বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সেই ডায়ালগকেই হাতিয়ার করতে হল বিচারপতি চন্দ্রচূড়কে।
বাস্তবতা হল যে দেশের আদালতগুলিতে যতজন বিচারপতি বা বিচারক প্রয়োজন ততসংখ্যক নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে চাপ বাড়ছে বিচারপতিদের উপরও। একটি পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কোর্টে পাঁচ লক্ষ মামলা ঝুলছে। দেশে এখন ৬ লক্ষের বেশি জেলবন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ‘আন্ডারট্রায়াল’ অর্থাৎ বিচারাধীন। তারা এখনও দোষী প্রমাণিত হননি। প্রায় ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার মানুষ কয়েদির জীবন কাটাচ্ছে বিচার ছাড়াই। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা কাজ করছে। বাছবিচার না করেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। জামিন পাওয়াটাও বেশ কঠিন। এর ফলে দীর্ঘদিন বন্দি থাকতে হচ্ছে বিচারাধীন অবস্থায়।