পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: তখনও ছেলের কফিনবন্দি লাশ এসে পৌঁছয়নি। ছেলের মৃত্যুশোকে কাতর মা। দু’চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরছে জল। ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন। এরকম হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে তাঁর দু’হাত ধরে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানোর মরিয়া চেষ্টা। মহামান্য মন্ত্রীমশাই এসেছেন! সঙ্গে সাগরেদ বিধায়ক। হাতে ৫০ লাখ টাকার চেক! তারপরই শুরু হয়ে গেল ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানি। মন্ত্রীমশাই ও বিধায়ক ক্যামেরার দিকে চেয়ে পোজ দিতে শুরু করলেন। অবাধে চলল ফটোশ্যুট। এসব দেখে শহিদের মা কান্নাভেজা গলায় অনুরোধ করেন ‘আমাকে নিয়ে প্রদর্শনী করবেন না…, এসব লোকদেখানো কাজ বন্ধ করুন।’ কে শোনে কার কথা। তিনি চেক ছুঁয়েও দেখলেন না। তাতে কি? মন্ত্রীমশায়রাই নিজেই চেক হাতে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাঁদের সর্বোচ্চ নেতা যখন আত্মপ্রচারের কোনও সুযোগ ছাড়েন না, এঁদেরই বা কী দোষ? ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসছেন নেটিজেনরা। আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরাও। অবিলম্বে মন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
গত ২২ নভেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে এনকাউন্টারের সময় শহীদ হন আগ্রার বাসিন্দা ক্যাপ্টেন শুভম গুপ্ত (২৭)। শুক্রবার তাঁর দেহ আগ্রায় নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিকভাবে আগ্রার বায়ুসেনার ঘাঁটিতে আনা হয় মৃতদেহ। শেষবারের মতো পৈতৃক গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় শুভমের দেহ। ঘরের ছেলেকে দেখতে প্রচুর মানুষ শুভমের বাড়িতে ভিড় করেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। চোখের জেল বিদায় জানানো হয় ক্যাপ্টেন শুভম গুপ্তকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী যোগেন্দ্র উপাধ্যায় এবং বিধায়ক ডক্টর জিএস ধর্মেশ ৫০ লক্ষ টাকার চেক দিতে ক্যাপ্টেন গুপ্তের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন। মন্ত্রীমশাই শুভমের বাড়িতে ঢোকার পর শুরু হয় ফটো সেশন। মন্ত্রীমশাইদের আচরণে বিরক্ত শহিদ ক্যাপ্টেনের মা বলেন, ‘ভাই আমাকে নিয়ে প্রদর্শনী করবেন না…, এসব লোকদেখানো কাজ বন্ধ করুন। টাকা নিয়ে আমি কি করবো? আমার ছেলে শুভমকে ফিরিয়ে দিন।’ কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সংবেদনশীলতার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া ছিল না। বরং ৫০ লাখ টাকার চেক নিয়ে ফটোশ্যুটে মগ্ন ছিলেন তারা।
উত্তরপ্রদেশ বিজেপি সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের এরকম কাজের নিন্দা করেছে বিরোধীরা। এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেস লিখেছে ‘শকুন’। ভাইরাল ভিডিয়ো শেয়ার করে, আপ সাংসদ রাঘব চাড্ডা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, বিজেপিতে ‘বি’ মানে বেশরম এবং ‘পি’ মানে প্রচার হওয়া উচিত। শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) -র রাজ্যসভার সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন, ‘মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মিনতি করছেন, ‘প্রদর্শনী করবেন না’, তবুও মন্ত্রী তার ফটো সেশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কেমন নির্লজ্জতা? হৃদয়হীন।’