পুবের কলম প্রতিবেদক: নিরাপত্তা দেওয়ার কথা যাদের, হাতে-নাতে ‘দালালচক্র’ রুখে দেওয়ার জন্য কাজ করার কথা যাদের, সেই তাঁদেরই কয়েক জনের বিরুদ্ধে খোদ হাসপাতালের কর্তব্যরত এক স্বাস্থ্যকর্মীকেই হেনস্থার অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনই ‘দালালচক্রে’ যুক্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে। এই ঘটনা এসএসকেএম হাসপাতালের।
অথচ, রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে যাতে সক্রিয় থাকতে না পারে কোনও ‘দালালচক্র’, তার জন্য বিভিন্ন সময় নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, এই অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও সচেষ্ট হচ্ছে, যাতে পুরোপুরি রুখে দেওয়া যায় যে কোনও ধরনের ‘দালালচক্র’, যাতে আগামী দিনে এই ধরনের কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন আর হতে না হয়। এ দিকে, ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠনের তরফেও জানানো হয়েছে, এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না হয়, তার জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
হাসপাতালে ভর্তি হোক কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্য কোনও বিষয়, রোগী অথবা, তাঁর বাড়ির লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ‘দালালচক্রে’র সক্রিয় থাকার অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, রোগী এবং তাঁর বাড়ির লোকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রুখে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও দেখা গিয়েছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের তরফে।
অথচ, এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে এমনই অভিযোগের বিষয়টি জানা গিয়েছে যে, এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বিভিন্ন সময় দেরি হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোগী কিংবা তাঁর বাড়ির লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ‘দালালচক্র’ সক্রিয় এখানে। আর, এরই জেরে এখানকার সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির এক কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মী তথা, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব)-কে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক এই ঘটনার পরের দিন তিন জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ওই তিনজনের মধ্যে একজন পুলিশের হোমগার্ড, একজন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং একজন হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী।
এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি থেকে কেউ যদি বার বার বিভিন্ন রোগীর রিপোর্ট সংগ্রহ করতে যান, তা হলে তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করেন কর্তব্যরত সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী। এই ধরনের ঘটনার জেরে কর্তব্যরত ওই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব)-কে টেনে-হেচঁড়ে নিয়ে যাওয়া এবং, তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল সূত্রে এমনই অভিযোগ উঠেছে, রোগী অথবা, তাঁর বাড়ির লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি থেকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পাইয়ে দেওয়ার কাজের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত ওই অভিযুক্তরা।
এসএসকেএম হাসপাতালের এই ঘটনায় ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজ্য সম্পাদক সমিত মণ্ডল বলেন, ‘সংগঠনের সব সদস্য এই ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করেছেন। এর ফলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতালের প্রশাসন, গ্রেফতার করা হয়েছে ওই তিন অভিযুক্তকে। আমরা চাই, এই ঘটনায় উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক যাতে আগামী দিনে এই ধরনের আর কোনও ঘটনা না দেখা যায়।’ তিনি বলেন, ‘অন-ডিউটি অবস্থায় একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব)-কে হেনস্থা করা হয়েছে। কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা যাদের, সেটা না হওয়ায়, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে কর্তব্যরত কর্মীদের।’ আগামী দিনে এই ধরনের কোনও ঘটনা কিংবা, কোনও ‘দালালচক্রে’র সম্মুখীন আর যাতে হতে না হয়, তার জন্য কি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? এই বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতাল তথা, কলকাতার আইপিজিএমইঅ্যান্ডআর-এর অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’