নাজির হোসেন লস্কর: মূমূর্ষু রোগীর রক্তের ব্যবস্থা থেকে ১০০ শতাংশ বিশেষ চাহিদা সম্পন্নকে হেয়ারিং এইডের ব্যবস্থা করে দিলেন প্রশাসনিক কর্তারা৷ জনসাধারণের অভিযোগের প্রতিকার করার লক্ষ্যে এক জনসংযোগ জন অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ শিবিরের আয়োজন করেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন৷ শনিবার জেলার ২৯টি ব্লকে অনুষ্ঠিত হয় এই শিবির৷ এদিন বিভিন্ন ব্লকে মোট ৩০৬৫টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়৷ যার মধ্যে ৪৮৯টি অভিযোগ ক্যাম্প চলাকালীন সমাধান করা হয়৷ বাকি ২৫৭৬টি নথিভুক্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিষেবা কবে পাবেন সে বিষয়ক অঙ্গীকারপত্র প্রদান করা হয় অভিযোগকারীকে৷ অঙ্গীকারপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযোগকারী পরিষেবা না পেয়ে থাকলে পুনরায় স্থানীয় বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে, সেই তারিখও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পত্রে।
এদিন ঠাকুরপুকুর মহেশতলা ব্লকে মন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল, জেলাশাসক পি উলগানাথন, অতিরিক্ত জেলাশাসক সামিউল আলামের উপস্থিতিতে ৬০ জনের অভিযোগকারীর পরিষেবা চালু হয়৷ কাকদ্বীপ ব্লকে জনসংযোগ শিবিরে অভিযোগ নিয়ে হটাৎই হাজির হয়েছিলেন মৃণাল সামন্ত। হাসপাতালে ভর্তি তাঁর বাবা। রক্তের প্রয়োজন। বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছিলেন মৃণালবাবু। বাজারে খবর পান ব্লকে আয়োজিত এক শিবিরে জনগণের কাছ থেকে যে কোনও সমস্যার কথা শুনে সমাধান করে দিচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা। দেরি না পৌঁছে যান শিবিরে। মৃণাল সামন্তর কথায়, বাজার থেকে খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে জনসংযোগ শিবিরে পৌঁছাই। বাবার অসুস্থতার কথা জানিয়ে রক্তের প্রয়োজনের কথা বলি এক আধিকারিককে। তারপর আমার বাবার জন্য দু’ইউনিট রক্ত পেতে পারি তার জন্য দুটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, মগরাহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে অনুরূপ এক জনসংযোগ শিবিরে মানুষের সমস্যা শুনতে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নমিতা সাহা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ হালদার, ডায়মন্ড হারবারের ডিএমডিসি অজয় সেনগুপ্ত, বিডিও শেখ আবদুল্লা। ব্লকের ১৪টি গ্রামপঞ্চায়েত থেকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাজির হন এলাকার কমপক্ষে ৮০ জন নাগরিক। অভিযোগকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাপি ফকির। ১০০ শতাংশ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাপি এবার উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। শুনতে অসুবিধা হয় তাঁর। এদিন ব্লক প্রশাসনের তরফে বাপি ফকিরের হাতে তুলে দেওয়া হেয়ারিং এইড। অন্যান্য অভিযোগকারীদের পরিষেবার পাশাপাশি সুরাইয়া খাতুন, তসলিম সেখ, শিউলি নস্কর নামের তিন বিশেষ চাহিদা সম্পন্নকে দেওয়া হয় হুইল চেয়ার। ৮ জন প্রাপককে প্রদান করা হয় ডিজিটাল জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র।
ক্যানিং-২ ব্লকে ‘জনসংযোগ’ শিবিরে ৭২ জন আবেদনকারী অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে উল্লেখ্য শতবর্ষ বয়সী এক ব্যক্তিকে হুইলচেয়ার হস্তান্তর করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সওকত মোল্লা, অতিরিক্ত জেলাশাসক শঙ্খ সাঁতরা প্রমুখ। কুলপি ব্লকে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা।
উল্লেখ্য, জনসাধারণের আরও উন্নত পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে সাধারণ নাগরিকরা যাতে সরাসরি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে তাঁরা যাতে দ্রুত পরিষেবা পান তার জন্য শুরু করেছে ‘জনসংযোগ’ শিবির৷ গত ২০ মে জেলার ৫ মহাকুমায় ‘জনসংযোগ’ নামে জনঅভিযোগ নিষ্পত্তির অভিনব কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন জেলাশাসক পি উলগানাথন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন অভিনব কর্মপন্থার পরিষেবা প্রতি মাসে ব্লকে ২টি শিবির এবং ১টি শিবির অনুষ্ঠিত হবে সমস্ত মহকুমায়৷ শিবিরে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক সহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন জনপ্রতিনিধিরাও৷ নির্দিষ্ট একটি পোর্টালের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণের গতিপ্রকৃতি দেখা যাবে৷