পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের মাস খানেক আর বাকি। এরই মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে মুসলিমদের মধ্যে। যদিও বিজেপি নেতারা বোঝাচ্ছেন, অযোধ্যা সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে থাকবে। তবুও আতঙ্ক বাড়ছে সেই সব পরিবারে যাদের বাড়ির কেউ না কেউ আগের হিংসার সময় প্রাণ হারিয়েছেন গেরুয়া বাহিনীর হাতে। মিডিয়া কথা বলে মন্দির এলাকার কাছাকাছি থাকা এক দর্জি সফি মুহাম্মদের সঙ্গে। সফি জানালেন, তিনি ১৯৯২ সালের হিংসা দেখেছেন, তাই বাড়ির মেয়ে ও বাচ্চাদের দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার ভয়, উদ্বোধনের সময় বহু মানুষ আসবেন বাইরে থেকে। তারা কেমন মানুষ হবেন, তার উপর ভরসা করা যায় না। ১৯৯২ সালে তার চাচাকে হত্যা করা হয়েছিল এখানে। তাই এবার মন্দিরের এত কাছাকাছি থাকাটা নিরাপদ মনে করছেন না শফি।
অযোধ্যার মানুষের সংখ্যা ৪০ লক্ষের বেশি। তার মধ্যে মুসলিম রয়েছে ৫ লক্ষ। কিন্তু অযোধ্যার মন্দিরের আশেপাশে মুসলিম বসতিতে রয়েছে চাপা উত্তেজনা। পুলিশ-প্রশাসন তাদের আশ্বস্ত করছে, তবুও উত্তেজনা রয়েছে। রাম মন্দিরের আশেপাশে প্রায় ৫০ হাজার মুসলিম বাস করেন। তারা ভয় পাচ্ছেন বাইরের লোকদের। তবে বেশিরভাগ পরিবার নারী ও শিশুদের আগে দূরে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চাইছে।
পারভেজ আহমদ কাসেমি মিডিয়াকে বলেন, রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন কি ঘটবে সেটা আগাম বলা যাচ্ছে না। তবে ভয় রয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে, পারভেজ যে স্কুল চালায় তার নাম অযোধ্যা ইসলামিক স্কুল। পারভেজের শ্বশুরকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তবে অনেক মুসলিম স্বীকার করছেন, নরেন্দ্র মোদির আমলে অযোধ্যায় কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হিংসার ঘটনা ঘটেনি। বিজেপি স্থানীয় নেতা-সমর্থকরা সকলেই এখানে পর্যটকদের কারণে আর্থিক উন্নতি নিয়ে ভাবছেন। অযোধ্যার মানুষ মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদি নিজে মন্দির উদ্বোধন করতে আসবেন। আর সামনে বছর লোকসভা ভোটে হাসতে হাসতে জয়ী হবেন তিনি।
অযোধ্যায় এক হিন্দু নেতা শারদ শর্মা জানান, অযোধ্যায় প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবেন পর্যটকদের জন্যই। এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুপম উদাহরণ হয়ে থাকবে। এখানে কোনও হিংসা-বিদ্বেষ স্থান পাবে না আর। সরকারি হিসেবে এখানে উদ্বোধনের সময় ৪০ লক্ষ মানুষের সমাগম হতে পারে। আর এত বিশাল জমায়েতে ভয় পাচ্ছেন মুসলিমরা। ৬২ বছরের হাজি আসান খান বলেন, সরকারের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। আমাদের সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যই তারা দেখবে। পুলিশ জানায়, এটা কোনও কমিউনিটির মানুষদের বিষয় নয়, সবারই নিরাপত্তা দেখার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের।
উল্লেখ্য, রাম মন্দির এলাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে মসজিদ তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণ শুরু হবে সামনের বছরে। অযোধ্যার আশেপাশে ইতিমধ্যেই জমির দাম আকাশচুম্বী। প্রমোটারের থাবা বসতে চলেছে মুসলিম সম্পত্তিতেও। আর সেটা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে মুসলিমদের মধ্যে। আর মসজিদ, কবরস্থান, ওয়াকফ সম্পত্তি বাঁচানো নিয়ে নতুন এক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মুসলিমরাও।