দেবশ্রী মজুমদার, বীরভূম: বিশ্বভারতীর আপত্তি উড়িয়ে , ‘প্রতীচী’ বাড়ির ১.৩৮ ডেসিমেল জমির পর্চা তে ‘ইজারা’ হিসেবে অমর্ত্য সেনের নামে নথিভুক্ত করল রাজ্য সরকার।
প্রয়াত আশুতোষ সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর ইজারা সংক্রান্ত উইল অনুযায়ী নতুন করে সম্পূর্ণ জমি অমর্ত্য সেনের নামে রেকর্ড করে দিয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর৷ সোমবার বীরভূম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয় টি জানানো হয়। যদিও এই নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি রাজ্য সরকারের রেকর্ডে জমির মালিক বিশ্বভারতীই আছে।
রাজ্য সরকার অমর্ত্য সেনের পাশেই। সেকথা নিজস্ব ট্যুইটার হ্যাণ্ডেলে জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে অমর্ত্য সেনের হাতে সেই নথি দিয়ে এসেছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৩ সালে অধ্যাপক সেনের পিতা আশুতোষ সেনের নামে ৯৯ বছরের জন্য জমি ইজারা দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে ২০০6 সালে এই জমি ঐ জমি অমর্ত্য বাবুর আবেদনে ভিত্তিতে মিউটেশন হয়। প্রতীচী বাড়িতে ১.৩৮ ডেসিমেল জমি রয়েছে। তাই সম্পূর্ণ জমি রেকর্ড সংশোধনের জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আবেদন করেছিলেন অমর্ত্য সেন। সেই মত বোলপুর বিএলআরও অফিসে দুবার দুপক্ষ কে ডাকা হয়। সেই মত বোলপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সঞ্জয় দাসের তত্ত্বাবধানে অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী ও বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস, কর্মসচিব অশোক মাহাত জমি সংক্রান্ত শুনানিতে হাজির হন। বিএলআরও দফতরে বসে দীর্ঘক্ষণ জমির রায়ত বিশ্বভারতী এবং সেই জমির ইজারা স্বত্ত্বভোগী অমর্ত্য সেনের আইনজীবী অর্থাৎ দুই পক্ষের দুইবার শুনানি হয় বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের করণে।
ইতিমধ্যে বিশ্বভারতী অমর্ত্য সেনকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানায়, যে তারা উনত্রিশ তারিখে অমর্ত্য সেনকে শুনানিতে ডেকেছেন এবং পাশাপাশি বিতর্কিত তেরো ডেসিমেল জায়গা উচ্ছেদের প্রক্রিয়া বজায় রেখেছে।
এদিন বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায় স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, মন্তব্যের ঘরে ইজারায় পিতা আশুতোষ সেনের জায়গাই তাঁর পুত্র অমর্ত্য সেনের নাম সংশোধিত বা নথিভুক্ত হয়েছে। এর ফলে আর কোনো বিতর্ক থাকল না।
যদিও সোমবার প্রেস মিট ডেকে বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অশোক মাহাতো দাবি করেন যে, অমর্ত্য সেনের নামে যে পরচা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, তাতে একটি ভুল ধারণা জন্ম নিয়েছে। এই পর্চায় শুধুমাত্র পিতা আশুতোষ সেনের জায়গাতে পুত্র অমর্ত্য সেনের নাম মন্তব্যের ঘরে ইজারায় এসেছে।
এর বেশি কিছু হয়নি। কর্মসচিব বিশ্বভারতী রায়ত অর্থাৎ জমির মালিক ছিল, সেটাই আছেন। উনিশশো বাই চব্বিশ শো সাতাশি দাগের দুশো সত্তর খতিয়ানে মোট জমির ষোল আনা মালিক বিশ্বভারতী উল্লেখ আছে। কিন্তু কোথাও বলা নেই যে ওই পরিমাণ জমির ইজারা অমর্ত্য সেনকে দেওয়া হয়েছে।
শুনানিতে আমরা লিখিত আবেদন করে বলেছিলাম জমির কত পরিমাণ ইজারায় অংশীদার সেটা উল্লেখ করে বিতর্ক বা সন্দেহ দূর করুন। এক্ষেত্রে তা করা হয় নি। শুনানির সময়ও তারা বলেছিলেন এর প্রয়োজন নেই। এই পরচায় আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে তেরো ডেসিমেল জায়গা উদ্ধারের প্রক্রিয়া বিভাগীয় দফতরের শুনানির আগে যেমন চলছিল, তেমনি চলবে। অন্যান্য জমি উদ্ধারের মতো এক্ষেত্রে একই ব্যবস্থাপনা হবে।