পুবের কলম প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরের ৩ দিকে থাকা স্থলভূমির আকার অনেকটাই ফানেলের মুখের মতো। তাই বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই তা আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ওড়িশা, বাংলা নতুবা ওপার বাংলার বুকে।
কখনও কখনও তা ধেয়ে যায় অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু বা মায়ানমারের পথেও। তবে তার সংখ্যা কম।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় তার অভিমুখ হিসাবে বেশির ভাগ সময়েই ওড়িশা, বাংলা অথবা বাংলাদেশের উপকূলকেই বেছে নেয়। এবার রাজ্য সরকারও বার বার বাংলার দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে উপকূলের বাসিন্দাদের আগে থেকেই সতর্ক করতে সাইরেন প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চলেছে।
এবার রাজ্যের উপকূলবর্তী দুটি জেলার বাসিন্দার জন্য আরও সতর্ক পদক্ষেপ নিতে চলেছে মমতা বন্দ্যপাধ্যায়ের সরকার। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে বাজানো হবে সাইরেন, যা শুনেই সব এলাকার বাসিন্দারা আগেভাগেই সতর্ক হয়ে আশ্রয় নিতে পারবেন নিরাপদ জায়গায়। বর্তমানে ঝড়ের বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনও পূর্বাভাস থাকলেই টোটো বা রিকশায় মাইক লাগিয়ে ঘুরে ঘুরে উপকূল এলাকার মানুষকে সতর্ক করতে দেখা যায় পুলিশকে বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের। দ্রুত এই ছবি বদলাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ঝড় আছড়ে পড়ার ২-৩দিন আগে থেকেই, মানুষকে সচেতন করতে রোজ সাইরেন বাজানো হবে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন যাতে বাড়ির বাইরে বা নিরাপদ আশ্রয়ের বাইরে বেড়িয়ে ঘোরাঘুরি না করেন তা নিশ্চিত করতে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকেই সাইরেন বাজানো হবে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায় এই সাইরেন বাজানোর মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন লাগোয়া এলাকাতেও এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এই ৩ জেলায় তৈরি করা হবে মোট ১৯৩টি টাওয়ার। সাইরেন বাজবে সেখান থেকেই। প্রতিটি সাইরেনের শব্দ ছড়িয়ে পড়বে ৮-১০ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে। নবান্ন সূত্রের খবর, টাওয়ার তৈরির জায়গা বাছাই করতে ইতিমধ্যেই একটি সমীক্ষার কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টি দেখভাল করছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহয়তায় এবং ন্যাশনাল সাইক্লোন রিস্ক মিটিগেশন (এনশারেম্পি) প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের অধীনে মোট ২০০ কোটি টাকার ব্যয়ে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে সাইরেনের পরিকাঠামো গড়তেই খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ টাকা দেবে রাজ্য। বাকি টাকায় এই উপকূলবর্তী এলাকায় কিছু স্কুল ও কলেজের সংস্কার করা হবে যেখানে ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে আমজনতা আশ্রয় নিতে পারবেন। পাশাপাশি নজর দেওয়া হবে সুন্দরবনের বুকে ম্যানগ্রোভের ঘনত্ব বাড়াতে গাছের চারা রোপণ করার দিকেও।