পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: পড়াশোনা হোক আনন্দের মাধ্যমে। এই ধারণাকে সামনে রেখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টায় শুরু হয় শান্তিনিকেতনে খোলা আকাশ, মুক্ত বাতাসের আবহে পড়াশোনা। ক্লাসের আবদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এক ছকভাঙা ঘরানার প্রচলন করেছিলেন কবিগুরু। ২০০৯ সালে বলিউডে মুক্তি পায় আমির খান অভিনীত হিন্দি সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’। সেখানেও ‘র্যা ঞ্চো’ নামে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের ভূমিকায় দেখা যায় আমিরকে। সিনেমার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে আমির বার্তা দেন, পড়াশোনা কখনও বোঝা নয়, আনন্দ করে পড়াশোনা করতে হবে। এবার সেই ধারাই তুলে ধরলেন কেরলের ৩০ বছর বয়সী শিক্ষক শফিক থালুভাই। শফিকের লেকচার তার শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেয়। কারণ তার পড়ানোর পদ্ধতি বাধাগত ছকে বাধা নয়। গান, মিউজিক, খেলাধুলোর মধ্যে দিয়েই জীবনের পাঠ দিয়ে থাকেন থালুভাই।
কেরলের মাল্লাপুরমের কুরুভা এইউপি স্কুলে এইভাবেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ববোধ তৈরি করেছেন তিনি। শিক্ষকের সুন্দর পড়ানোর কায়দায় কঠিন বিষয়গুলি যেন খুব সহজবোধ্য হয়ে ওঠে। পরিবেশ বিদ্যা ক্লাসে থালুভাই কবি ও মুক্তিযোদ্ধা আমসি নারায়ণ পিল্লাইয়ের কবিতা পড়ান। তার পরে ছাত্রদেরও সেই কবিতার পুনরাবৃত্তি করতে বলেন তিনি। শফিক আবৃত্তি করেন “ভারিকা ভারিকা সহচারে” (এসো, সহযাত্রীরা এসো)। ছাত্ররাও বলতে থাকেন। ‘রচিচতরু কুত্তরে’? (কে লিখেছেন, বন্ধুরা)। ছাত্ররা সমবেতভাবে বলতে থাকে কবি ও মুক্তিযোদ্ধা আমসি নারায়ণ পিল্লাই। অট্টান্থুল্লাল নৃত্যের ধরন সম্পর্কে শেখানোর সময়েও শফিক একজন অটন্থুল্লাল শিল্পীর চরিত্র নিজের মধ্যে নিয়ে আসেন। তার পড়ানোর মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে সৃজনশীলতা। শফিকের কথায়, আমরা যখন কোনও কিছু গান বা কবিতার মাধ্যমে অধ্যয়ন করি, তখন সেগুলি বেশি করে মনে থাকে। ‘ওয়ারিকা ভারিকা সত্যচারে’ কে লিখেছেন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররা সহজেই সেই উত্তর দিতে পারে।
শফিক থালুভাই জানিয়েছেন, তার মূকাভিনয়, থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ছাত্রদের এই পড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শিক্ষকতার প্রতি ছিল তাঁর অদম্য ভালোবাসা। গত সাত বছর ধরে মাল্লাপুরমের কুরুভা এইউপি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করছেন। গত বছর শিক্ষার্থীরা ৭৫ শতাংশ বেশি স্কোর অর্জন করেছে।
শফিক জানান, আমার পড়ানোর পদ্ধতিটি আলাদা। সকলের কাছে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। পড়ুয়াদেরও খুব আনন্দ দেয়, তারা ভালো রেজাল্ট করছে। আর তাদের এই উন্নতি আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়।
স্ত্রী ই কে সাফা রাসমা ও কন্যা শিমাজ আয়সালকে নিয়ে কুরুভারের বাসিন্দা শফিক থালুভাই। শফিকের কাছ থেকে মানকাদা উপ-জেলার সহশিক্ষক সহ বহু শিক্ষকরা এই পদ্ধতির তালিম নেন।