পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক:
ঘটনা অনেক। গুণে শেষ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রাজস্থান থেকে ওড়িষা, হরিয়ানা থেকে কর্নাটক— সর্বত্র একই ছবি। গোরক্ষার নামে একের পর হামলা। সংখ্যালঘুদের উপরে, বিশেষত মুসলিমদের উপরে হামলা করাকে বীরত্বের কাজ বলে মনে করা হয়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অজুহাতে কট্টর সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠা।এসব চলছেই।
চলতি সপ্তাহ জুড়ে গো-রক্ষার নামে হিংসার বেশ কিছু ঘটনা আবার রাজ্য রাজ্যে দেখা যাচ্ছে।
১৩ জানুয়ারি রাজস্থানের আলওয়ার জেলায় গবাদি পশু পরিবহনের জন্য একটি মিনি ট্রাক চালককে বেধড়ক মারধোর করা হয়েছে।১৩ জানুয়ারি ওড়িষার কুয়াখিয়া সেতুতে দুই ব্যক্তিকে গবাদি পশু পরিবহনের সময় হামলা করা হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে একদল মানুষ দুই চালককে ধরে রেখেছে এবং জনসমক্ষে তাদের মারধর করছে৷ অন্য একটি ঘটনায়, হরিয়ানার ঝাজ্জার জেলায় গো- রক্ষকরা গরু পরিবহনকারী একটি ট্রাককে তাড়া করেছে৷ গাড়িটিতে দিল্লির নামফলক ছিল। ৫ জানুয়ারি, গোরক্ষকরা গবাদি পশু পরিবহনকারী একটি ট্রাককে ১২ কিলোমিটার পথ বিপজ্জনক গতিতে তাড়া করে নিয়ে যায়। গোরক্ষকদের হাত এড়াতে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে ট্রাক থেকে গরু পড়ে যাওয়ার দৃশ্যের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ট্রাকটিকে শেষ পর্যন্ত ধরা হয় এবং ট্রাকের দুজন যাত্রী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানার গুরগাঁওয়ের পাঁচগাঁও চকে।
গবাদি পশু মেওয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চালক জাফরকে বিলাসপুর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, এবং আইপিসি ধারা ২৭৯ (রাশ ড্রাইভিং) ৩৩৬ (তাড়াতাড়ি এবং অবহেলামূলক গাড়ি চালানোর ফলে মানুষের জীবন বা নিজের বা অন্যের ব্যক্তিগত সুরক্ষা) এবং পশু নিষ্ঠুরতা আইন ২০১৫ এর অধীনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে হরিয়ানাতে দুজন মুসলিম যুবককে গরু পাচারের অভিযোগে নৃশংসভাবে জ্বালিয়ে হত্যার পর মূল অভিযুক্তদের যাতে গ্রেপ্তার না-করা হয়, সেই হুঁশিয়ারি দিয়ে কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো একের পর এক সমাবেশের আয়োজন করেছে।
গণধোলাইয়ে মৃত্যু ও গোরক্ষার নামে উগ্র গেরুয়াপন্থীদের তাণ্ডব নিয়ে অনেকদিন ধরেই কেন্দ্রের মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি৷ প্রতিবাদ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি থেকে শুরু করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁদের অভিযোগ, হিন্দুত্বের নামে গোটা দেশজুড়ে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির। বিরোধীদের অভিযোগের উত্তরও দিয়েছে কেন্দ্র৷ গণপিটুনি ও গোরক্ষকদের তাণ্ডব রুখতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ উঠলে কোনও রং না দেখেই আগে কড়া পদক্ষেপ নিক রাজ্য সরকারগুলি৷ একাধিকবার তিনি বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা যেহেতু রাজ্যের বিষয় তাই তাতে হস্তক্ষেপ করবে না কেন্দ্র৷বহুজন সমাজ পার্টির দলিত নেত্রী মায়াবতীও গো-রক্ষার নামে মুসলিম ও দলিত হামলা বন্ধে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
গো-রক্ষকদের হিংসা নিয়ে চরম হুঁশিয়ারি দেয় সুপ্রিম কোর্টও। দেশ জুড়ে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব বন্ধ করতে অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ করুন। কেন্দ্র-রাজ্য— উভয় পক্ষকেই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।