আগরতলা: উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগরে মুসলিম-বিরোধী হিংসার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা হাতে নিল ত্রিপুরা হাইকোর্ট। এই মামলায় ত্রিপুরায় উচ্চ আদালত ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে হলফনামা জমা দিয়ে শান্তি ফেরাতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে বলল। ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ মহান্তি ও বিচারপতি শুভাশিস তালপত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ২৬ অক্টোবর উত্তর ত্রিপুরা জেলার মুসলিম বিরোধী হিংসার এবং সম্প্রতি |নোকোটি ও সোহিজালায় হিংসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। সেই কারণে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা হাতে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মামলায় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শঙ্কর দে। তিনি আদালতকে জানান, বাংলাদেশে সম্প্রতি দুর্গাপুজো প্যাণ্ডেলে একটি হিন্দু মন্দির ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে গত ২৬ অক্টোবর উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এই মিছিল বার করে। তার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু হাইকোর্ট মন্তব্য করে এতদসত্ত্বেও সেখানে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত ছিল। হাইকোর্ট বলে সরকারের উচিত শুধু জেলা কিংবা মহকুমা ভিত্তিক নয়, পঞ্চায়েত এলাকা ভিত্তিক শান্তি কমিটি গঠন করা। শান্তির প্রক্রিয়া সফল করতে সব রাজনৈতিক দলগুলির উচিত সাহায্য করা।
অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, প্রতিবাদ মিছিলের সময় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাছে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মুসলিমদের তিনটি দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মুসলিমদেরই তিনটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আরও অভিযোগ করা কয়েছে যে একটি স্থানীয় মসজিদকে ভাঙা হয়েছে এবং মুসলিম মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে বলেন, ভিএইচপির তরফে পালটা অভিযোগে বলা হয়েছে তাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদ মিছিলে অপর পক্ষ হামলা করেছে। এই দুরকম অভিযোগের পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানানো হয় আদালতকে। অ্যাডভোকেট জেনারেল আরও বলেন, নোকোটি এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা ভিড় জমান। পুলিশ এসে সেই ভিড় সরিয়ে দেয় এবং এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়। অ্যাডভোকেট জেনারেলের হলফনামায় জানানো হয় ধর্মনগর, পানিসাগর, আমতলি ফুলবাড়ি, লক্ষ্মণ ধেপায় বিভিন্ন সম্প্রদায়কে নিয়ে পুলিশ শান্তি বৈঠক করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু খবর ছড়িয়ে পড়ছে যার কোনও অস্তিত্ব নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে বহু ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। পুলিশ অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী গোমতী জেলার কবিড়াবদ, সেপাহিজালার খেলাঘর এবং পুর্ব আগরতলার ঠাকার জালা থেকে আরও পাঁচটি সাম্প্রদায়িক হিংসারও ঘটনা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। এই মামলাগুলিতে দু’জনকে আটক করা হয়েছে এবং আরও দুজনকে পাঠানো হয়েছে। আদালত রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসার মামলার তদন্তের খুঁটিনাটি জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এ নির্দেশও দিয়েছে যে সাম্প্রদায়িক হিংসার মামলায় যাকে গ্রেফতার করা হবে তার বিশদ তথ্য যেন জানানো হয় আদালতকে।