পারিজাত মোল্লা: অবশেষে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট নিস্পত্তি ঘটাতে নিদিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিল।একাধারে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডি কে যেমন দু মাসের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। ঠিক তেমনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নজরদারিতে ছয় মাসের মধ্যে সমস্ত মামলার রায়দান করতে হবে।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এতে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে বিশেষ বেঞ্চ গঠন হতে পারে। রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা কলকাতা হাইকোর্টে ফিরিয়ে দিল সুপ্রিমকোর্ট।
আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এই নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে যে তদন্ত করছে সিবিআই, সেই সমস্ত তদন্ত আগামী দু’মাসের মধ্যে শেষ করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে এই সংক্রান্ত যে সব মামলা এতদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন ছিল, সেগুলিকেও কলকাতা হাইকোর্টে ফিরিয়ে দেওয়া হল।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, -‘এই মামলার শুনানিও আগামী ছ’মাসের শেষ করতে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে’।পাশাপাশি তদন্ত শেষ, মামলার নিষ্পত্তি করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনও চাকরি বাতিল হবে না, বৃহস্পতিবারের নির্দেশে এমনই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বেঞ্চ।এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চ মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছেন।
প্রথম, ২ মাসের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে।তার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির অধীনে স্পেশাল বেঞ্চ তৈরি হবে।দ্বিতীয়, ৬ মাসের মধ্যে মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে হবে।তৃতীয়, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কারও চাকরি বাতিল করা যাবে না। এদিন নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, নবম, দশম গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি সহ নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যত মামলা রয়েছে তার সবকটির সমাধান করে ফেলতে হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে, প্রতিটি বিভাগেই গুচ্ছ চাকরি বাতিল করা হয়েছিল। সবকটাই ছিল অবৈধ নিয়োগ।
অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে এই নিয়োগ দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান চাকরিহারী প্রার্থীরা। সেই মামলার শুনানি ছিল এদিন । তখনই এই নির্দেশ দেয় সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, এবার থেকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলা শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চই সিদ্ধান্ত নেবে কাদের চাকরি যাবে? কাদের চাকরি থাকবে? সেই সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। এদিন নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের সময়সীমাও বেঁধে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।আদালত সূত্রে প্রকাশ , নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে এখনও পর্যন্ত কী কী তথ্য উঠে এসেছে, এদিন তা আদালতকে জানায় সংস্থা সিবিআই।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে এ বিষয়ে আদালতে চারটি রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে। এরপরই নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত (১২ টি) মামলা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৪,৫,৬ তারিখ ব্যাপী ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চে’র ব্যানারে পরিচালিত নবম থেকে দ্বাদশ এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি স্তরের বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টে একটি গণ ইমেল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করে নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগেই মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে সুপারনিউমেরারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয় এবং আইনের জটে পড়ে দুর্নীতির কারণে ন্যায্য চাকরি থেকে বঞ্চিত নবম -দ্বাদশ,গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি স্তরের বঞ্চিত যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ ভবিষ্যৎ আটকে পরে।
এর ফলে সরকার আইনের জটিলতা দেখিয়ে নীরব হয়ে যায় । পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্টে সুপার নিউমেরারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রতার জন্য বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ ভবিষ্যৎ ঝুলে যায়। উক্ত বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নবম -দ্বাদশ এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি স্তরের বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে গণ ইমেল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন উক্ত সংগঠনের নেতা সুদীপ মন্ডল মহাশয় ।