আহমদ হাসান ইমরান: মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করলেন। আর তা হল, তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র ট্রাইবালদের প্রাচীন বিশ্বাস ও আস্থার সমন্বয়ে সারি ও সারনা ধর্ম রয়েছে, তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আর এই বিষয়ে তিনিই পথিকৃৎ। শীঘ্রই সারি ও সারনাকে ‘ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একটি বিল আনা হচ্ছে। আর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসী ও ট্রাইবালদের সংখ্যা কম নয়। বেশকিছু জেলায় তাদের অবস্থান ও উপস্থিতি রয়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরে তো আদিবাসী ট্রাইবালরা রয়েছে। এ ছাড়া, আলিপুরদুয়ার, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়েও ট্রাইবালরা রয়েছে বড় সংখ্যায়।
ভারতের বহু প্রদেশে রয়েছে ট্রাইবালদের উপস্থিতি। তাদের প্রাধান্য দিয়ে দু’টি রাজ্য ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি হল ঝাড়খণ্ড, অন্যটি ছত্তিশগড়।
এ ছাড়া বিহার, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যেও তাদের সংখ্যা এবং এলাকা কম নয়।
এই সমস্ত জেলা ও প্রদেশে ট্রাইবালদের বহুদিন থেকে জোরদার দাবি হচ্ছে, তারা ‘হিন্দু’ নয়। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে তাদের আলাদা ধর্ম রয়েছে। রয়েছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ভাষাও। তাদের ধর্মকে ‘সারনা ধর্ম’ বলে অভিহিত করে থাকে।
এ ছাড়া তারা একাংশ ‘সারি ধর্ম’ এরও অনুসারী। কিন্তু ভারতের সেনসাসে তাদের সম্মতি ছাড়াই তাদেরকে ‘হিন্দু’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা তা মানতে রাজি নয়।
এ নিয়ে ট্রাইবাল বেল্ট বা এলাকায় জোরদার দাবিও রয়েছে। আরএসএস, বিজেপি ও বিশ্বহিন্দু পরিষদ ভূমিপুত্র ট্রাইবালদের ‘বনবাসী’ আখ্যা দিয়ে তাদের ‘হিন্দুকরণের’ জন্য নানা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।
এদের মধ্যে হিন্দুকরণের কাজ করার জন্য আরএসএস বহু ‘স্বামী’ ‘সনৎ’ কে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করেছে।
বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত স্বামী অসীমানন্দ গুজরাতে একটি ট্রাইবাল বেল্টে আরএসএস-এর হয়ে কাজ করতেন। ভারতে কম করে ১০ শতাংশ নাগরিক হচ্ছেন আদিবাসী ট্রাইবাল। তাদের এলাকাগুলি অনুন্নত বলে এবং সেইসঙ্গে আদিবাসীরা লাগাতার বঞ্চনার স্বীকার হওয়ায় আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে নকশালরা বেশ সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্যাণে বাংলার আদিবাসীদের সারনা ও সারি ধর্ম স্বীকৃতি পাওয়ায় ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও এই ধর্মকে মান্যতা দেওয়ার দাবি আরও জোরদার হবে। আদিবাসী নেতৃবৃন্দ। সারা ভারত জুড়ে এজন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুবারকবাদ জানিয়েছেন।