নয়াদিল্লি: প্রায় চার বছর আগে সরকারের মদতে বহু খুনের ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে এবং তার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও অন্যান্য সংস্থাকে দায়ী করেছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট। এনকাউন্টারে হত্যায় তদন্তের সময় পুলিশের পাশাপাশি এই সংস্থাগুলি অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিল। এই রিপোর্টের শিরোনাম ‘এক্সটিঙ্গুইশিং ল অ্যান্ড লাইফ; পুলিশ কিলিং অ্যান্ড কভার আপ ইন দ্য স্টেট অফ উত্তরপ্রদেশ’। এই রিপোর্ট তৈরি করেছে ইউথ ফর হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন (ওয়াইএইচআরডি), সিটিজেনস এগেন্সট হেট (সিএএইচ) ও পিপলস ওয়াচ (পিডব্লিউ)। যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সরকারি মদতে যে হত্যাগুলি ঘটেছে এমন ১৭টি ঘটনার সমীক্ষা করে প্রস্তুত করা হয়েছে এই রিপোর্ট।
২০১৮ সালের ৯ মে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের তদন্তকারী বিভাগকে এই সতেরোটি ঘটনার সত্য অনুসন্ধান করে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু সেই তদন্ত হয় যথাযথ তদন্ত ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নয়ত তিন বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। এমনটাই জানানো হয়েছে সাম্প্রতিক রিপোর্টে। আরও বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তদন্তকারী এজেন্সি ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আইন লঙ্ঘ করেছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীন সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও অন্যান্য দফতর যেমন ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তদল এই আইন লঙ্ঘনকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং খুনের ঘটনায় পুলিশের বয়ানের যে পরস্পরবিরোধিতা ছিল তাকে উপেক্ষা করেছে। পরিবর্তে তারা অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া চালিয়েছে তদন্ত চলাকালে। ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর অনলাইনে এই রিপোর্টে প্রকাশ করেছেন। এই রিপোর্ট যাতে সর্বস্তরে গুরুত্ব পায় তাই বিচারপতি লোকুর মুখবন্ধও লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তাৎক্ষণিক বিচারে’র নামে এমন অসাংবিধানিক হত্যাকাণ্ডকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মর্যাদার পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। বহুক্ষেত্রে এগুলি ঠান্ডা মাথায় খুন ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারি মদতে হত্যাকাণ্ডের বাস্তবচিত্রের মুখোশ খুলে দিয়েছে এই রিপোর্ট। যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উঠে এসেছে এই রিপোর্টে সেগুলি হল :
১৭টি হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিহতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় খুনের চেষ্টা ও অন্যান্য চার্জ এনে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। কেবলমাত্র একটি ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ১৭টি হত্যাকাণ্ডের এফআইআরে হুবহু একই ধরনের দাবি তোলা হয়েছে। নিহতদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াই বাঁধে আর তখন আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি ছোঁড়ার ফলে অভিযুক্ত নিহত হয়েছে। এদিকে, অভিযুক্তের সহযোগী পালাতে সক্ষম হয়েছে প্রতিবারেই। এর ফলেই এই এফআইআরের বয়ান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশন সব জানা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।