পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ শারীরিক প্রতিবন্ধতা যে কোনও বাধা হতে পারে না, তাই প্রমাণ করে দেখালেন বসিরহাটের ছেলে মুহাম্মদ আবু মুসা গাজী। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন আবু মুসা। দেশে মধ্যে ৪৮ জনের হয়ে ভারত সরকারের ন্যায় অধিকার মন্ত্রালয়ের জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন আবু মুসা। আজ তাঁর এই কৃতিত্বে গর্বিত গোটা দেশ।
বসিরহাটে জন্ম আবু মুসা গাজীর। জন্মের পর ভাগ্য মুখ ফিরিয়েছিল তার থেকে। শিক্ষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আবু মুসা। আর পাঁচটা শিশু যে ভাবে বড় হয়ে ওঠে, সেখানে আবু মুসার জীবন তখন অন্যদিকে হাঁটছিল। একদিকে কানে শুনতে না পাওয়া, কথা বলতে না পারা এই সমস্যাকে সঙ্গী করেই জীবনের চাকার গড়াতে থাকে তার। তবে শরীর তার সাথ না দিলেও মনকে ক্রমশই তৈরি করে তুলছিল আবু মুসা।
১৮ বছর আগে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের হাসনাবাদ ব্লকের চকপাটলির বেনা গ্রামে সংবাদপত্র ঢুকতে সময় লেগে যেত বেলা ১১ টা। তাও বাড়িতে পৌঁছত না কাগজ। সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের ফেরিঘাটে গিয়ে সংবাদপত্র জোগাড় করে পড়ত সে। তৎকালীন ২০০৩ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি বিশেষ কলাম প্রকাশিত হত। সেখানেই ভারত সরকারের বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য বিশেষ সরকারি সুযোগ সুবিধার কথা জানতে পারে মুসা। লোনও নিয়েছিলেন ৫০০ টাকা। তখনও মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেনি সে। কিন্তু আবুর লড়াইটা শুরু হয়েছিল ঠিক সেই সময় থেকে। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু হয় হাতের কাজ। শুরু হয় লড়াই। থেমে থাকেনি আবু মুসার জীবন।
প্রথমে টেলারিং দিয়ে কাজ শুরু। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইন। শুধু এ রাজ্য নয়, রাজ্যের বাইরেও নাম ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে আবু মুসা গাজীর। মিলেছে স্বীকৃতিও। ২০০৯ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের সামাজিক ন্যায় অধিকার মন্ত্রকের কাছ থেকে পুরস্কার পান তিনি। বর্তমানে তিনি শুধু নিজেই সুপ্রতিষ্ঠিত নন, আজ প্রায় ৫০ জনের ভরসা জায়গা তিনিই। নিজের টেলারিং সেন্টারে প্রায় ৫০ জনের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে।
একাধিক সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত আবু মুসা। সেই সঙ্গে জাতীয় মূক-বধির দলের ক্রিকেটর সহ দীর্ঘ ৬ বছর বেঙ্গল ডেফ ক্রিকেট অ্যাসোসিশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ও অল ইন্ডিয়া ডেফ ক্রিকেট অ্যাসোসিশনের সদস্য ছিলেন তিনি। অবশেষে জাতীয় পুরস্কারের স্বীকৃতি মেলে।
সম্প্রতি গত ৩ ডিসেম্বর দেশের প্রায় ১১০০ প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৪৮ জনকে ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায় অধিকার মন্ত্রালয় থেকে গোল্ড মেডেল সহ শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর মধ্যে বসিরহাট তথা রাজ্যের হয়ে এই পুরস্কার পান আবু মুসা গাজী।
আবু মুসা গাজী একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার। চেষ্টা, মনের জোর থাকলে যে, জীবনে জয়ী হওয়া যায় তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ বসিরহাটের আবু মুসা গাজী। যা আজ অন্যদের অনুপ্রেরণা।
আবু মুসা গাজী চান, তার মতো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষেরা যেন কোনওদিন জীবনযুদ্ধে হেরে না যায়। মনের জোরটাকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। আর মনটা বোঝাতে হবে, আমি অবশ্যই পারব।
শুধু তাই নয় সমাজের পিছিয়ে পড়া চাহিদা সম্পন্নদের পাশে থাকতে চান আবু মুসা। তাঁদের জন্য স্কুল গড়তে চান তিনি। কেউ যদি তার মতো টেলারিংকে পেশা করতে চায়, তাহলে তাঁদের পাশেও থাকতে চান তিনি।ছেলের এই কর্মকাণ্ডে তাঁর পাশে তাঁর পরিবার সহ বাবা মুহাম্মদ রাহুল আমিন। আবু মুসার এই কৃতিত্বে গর্বিত মানুষজনও।