সেখ কুতুবউদ্দিন: সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা-২০২৩ এর ফলাফল। গোটা দেশের মধ্যে ১ হাজার ১৬ জন এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার মেয়ে সাইমা খান। সাইমার সাফল্যে তাঁর পরিবারের পাশাপাশি খুশি গোটা বাংলার মানুষ। বিভিন্ন মহল থেকে সাইমার কাছে আসছে শুভেচ্ছা বার্তা। একই ভাবে সাইমার সাফল্যে খুশি হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। আগামী দিনে এই বাংলা থেকেই সাইমার মতোই বহু কৃতী আরও সাফল্য পাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন ইমরান।
এদিকে সাইমা খানের সাফল্য ও আগামী দিনে তাঁর পথচলার বিষয়ে কথা বলেন প্রতিবেদক। সাইমা এক সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদককে বলেন, মানুষের পাশে থেকে কাজ করার যা তৃপ্তি, আর অন্য কিছুতে নেই। তিনি আরও জানান, সোশিওলজি বিষয়ে স্নাতক করার সময় থেকেই মানুষের জন্য কাজ করার মধ্যে আনন্দ আছে— এটা বুছেছিলাম। সদ্য ইউপিএসসি উত্তীর্ণ সাইমা খানের সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক-১৬৫। সাইমার কথায়, মানুষের জন্য কাজের মধ্যেই আত্মার তৃপ্তি রয়েছে, আর তাই আইএএস হওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়েছি।
২০১৭ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক উত্তীর্ণ হন সাইমা খান। তারপর থেকেই ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্ততি শুরু করেন তিনি। সাইমা খানের প্রথম থেকেই জেদ, যতদিন না ইউপিএসসিতে উত্তীর্ণ হই, ততদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি। সেই থেকে কঠোর পরিশ্রম শুরু তাঁর। শরীর খারাপ থাকলেও কোচিং সেন্টারে মক টেস্ট দিতে হাজির। তাঁর এই জেদ দেখে কোচিংয়ের কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরাও অভিভূত।
সাইমা বলেন, সোসিওলজি ভালো লাগত। স্নাতক থেকেই সমাজে বসবাস করা মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন সম্পর্কে অবগত হয়েছি। সমাজে অনেক কিছু পরিবর্তন দেখেছি। তাই সোসাইটি অথবা সমাজের জন্য এবার কিছু করতে পারবো। সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর কাজে অংশ নিতে পারবো।
কলকাতার খিদিরপুর-মোমিনপুরের আলিপুর মোড়ে বাড়ি সাইমার। পরিবারে রয়েছেন আব্বা সিরাজ আহমেদ খান, পেশায় ব্যবসা। মা বাড়িতেই থাকেন। সাইমা সহ তিন ভাই রয়েছেন পরিবারে। ভাইরাও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সাইমার কথায়, দাদু নিয়াজ আহমেদ খান, আব্বা, মা ও আমার পরিবার কোনওভাবে চাপ দিতেন না। বরং পড়াশোনা ও পেশার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছেন। উৎসাহ যুগিয়েছেন। কোনও কাজে ব্যর্থ হয়েছি। পরিবার কখনও হতাশ হয়নি। পাশাপাশি আমিও নিরাশ হইনি। বরং ধৈর্য ধরে পড়াশোনা করে গিয়েছি। আমাকে আইএএস হতেই হবে। তাই অন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেও তেমন মনোযোগ দিইনি।
এর আগে ইউপিএসসি’র দুইবার প্রিলিমিনারি এবং এক বার মেইন পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারিনি। বারবার য’ন ব্যর্থ হয়েছি, আমার মধ্যে তত জেদ তৈরি হয়েছে। মনে মনে ক্ষোভ হয়েছে, তবুও হাল ছাড়িনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া অব্যাহত রেখেছি। রোযাও রাখি। শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেছি, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, আল্লাহ আমাকে সেই কাজ করার জন্য সুযোগ দিন।’। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ করেছেন আল্লাহ।
পার্ক স্ট্রিটের পার্ক প্লাজায় অবস্থিত এডুক্রাট আইএএস আকাদেমির অধিকর্তা সৌম পাল বলেন, সাইমা খান অত্যন্ত মেধাবি। কোনও দিন ক্লাসে ফাঁকি দিত না। তাঁর মধ্যে একটা জেদ তৈরি হয়েছিল। কোনও জিনিস না বুঝতে পারলে শিক্ষকদের কাছে বাববার জিজ্ঞেস করতেন। অর্থাৎ জানার প্রবল আগ্রহ ছিল তাঁর। আমরাও চাই, সাইমা খান, পারমিতা মালাকারের মতো পড়ুয়ারা ইউপিএসসিতে আরও সফল হোক।