পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই ইস্যুতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে কারণ দেশের প্রধানমন্ত্রীর কনভয় সম্প্রতি পাঞ্জাবের একটি ফ্লাইওভারে ২০ মিনিট আটকে ছিল যেখান থেকে পাকিস্তানের সীমান্ত খুব বেশি দূরে নয়। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে গিয়েছিল। এরপর ফিরোজপুরে জনসভা বাতিল করে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাতিন্ডা বিমানবন্দরে পাঞ্জাব সরকারের আধিকারিকদের বলেন, ‘আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেবেন যে আমি বিমানবন্দর পর্যন্ত জীবিত ফিরে আসতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) হাতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন কোনও রাজ্যে সফরে থাকেন, তখন রাজ্য পুলিশেরও দায়িত্ব থাকে। ‘এসপিজি’র সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিজিপি এবং মুখ্য সচিবকে অবহিত করা হয়। সিকিউরিটি প্ল্যানের কথাও বলা হয় এসএসপি ও ডিএমকে। জরুরী অবস্থার জন্য কন্টিনজেন্সি প্ল্যানও প্রস্তুত রাখা হয়। তিনি বলেন, এসএসপিরাও প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে থাকেন এবং একটি বিকল্প পথও প্রস্তুত রাখা হয়।
কেবল মোদিই পান এসপিজি নিরাপত্তা
এসপিজির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর নিকটতম আত্মীয়রাও পেতেন। কিন্তু দু’বছর আগে ‘এসপিজি’ আইন সংশোধন করা হয়। এরপর এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই পেয়ে থাকেন। এসপিজি’র নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অত্যন্ত কঠোর বলে মনে করা হলেও এতে জওয়ানের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। বিপদের আশঙ্কায় এই সংখ্যা ওঠা নামা করে। এসিপিজি বহরে যানবাহন এবং বিমানও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য দৈনিক খরচ হয় ১.১৭ কোটি টাকা
এসপিজি’র বাজেট ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১৪-১৫ সালে যখন মোদি সরকার কেন্দ্রে আসে, তখন এসপিজি’র বাজেট ছিল ২৮৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে এটি বেড়ে ৩৩০ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৯-২০ সালে এসপিজি’র বাজেট ছিল ৫৪০.১৬ কোটি টাকা। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি ছাড়াও সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও এসপিজি সুরক্ষা পেতেন। অর্থাৎ এক বছরে প্রত্যেকের নিরাপত্তায় খরচ হচ্ছিল ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে এসপিজি’র বাজেট ছিল ৪২৯.০৫ কোটি টাকা। বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই এসপিজির নিরাপত্তা পাচ্ছেন। অর্থাৎ, তাঁর নিরাপত্তায় প্রতিদিন ১.১৭ কোটি টাকা, প্রতি ঘণ্টায় ৪.৯০ লাখ এবং প্রতি মিনিটে ৮,১৬০ টাকা নিরাপত্তায় খরচ হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়
এসপিজি কমান্ডোদের নিরাপত্তা ৪ স্তরের। প্রথম স্তরে, এসপিজি দলের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় এসপিজির ২৪ জন কমান্ডো মোতায়েন থাকে। কমান্ডোদের কাছে একটি করে এফএনএফ-২০০০ অ্যাসল্ট রাইফেল রয়েছে। এছাড়া থাকে সেমি-অটোমেটিক পিস্তল এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী থাকেন বুলেট প্রুফ গাড়িতে। কনভয়ে ২টি সাঁজোয়া যান থাকে। ৯টি হাইপ্রোফাইল গাড়ি ছাড়াও অ্যাম্বুলেন্স ও জ্যামার থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে একটি ডামি গাড়িও চলে। কনভয়ে থাকে কমপক্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর একশো জওয়ান।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করা হয়। এরপরে, ১৯৮৮ সালে সংসদে এসপিজি আইন পাস হয় এবং এসপিজি গঠিত হয়।