পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ মেয়েদের বিয়ের বয়সের আইনত কত হওয়া উচিত– তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশে মহিলাদের বিবাহের আইনি বয়স সংক্রান্ত একটি বিল পরীক্ষা করার জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে । ৩১ সদস্যের ওই কমিটিতে মাত্র একজন মহিলা সাংসদ রয়েছেন । বিলটি মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের । বিবাহের আগে বয়স ১৮ থেকে ২১ এ উন্নীত করার বিষয়ে ওই সংসদীয় কমিটির পর্যালোচনা করবে । প্রবীণ বিজেপি নেতা বিনয় সহস্টËবুদ্ধের নেতৃত্বে ওই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়েছে । ৩১ জনের কমিটির একমাত্র মহিলা সাংসদ হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব। ওই সাংসদ সাংবাদিকদের বলেন – সংসদীয় কমিটিতে আরও মহিলা সাংসদ থাকলে ভাল হত । কিন্তু আর কোন মহিলা সাংসদকে নেওয়া হয়নি ।প্রস্তাবিত আইনটি দেশের সকল সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং একবার কার্যকরী হলে– বিদ্যমান বর্তমান বিবাহ ও ব্যক্তিগত আইনগুলিকে ছাড়িয়ে যাবে। তাই আরও মহিলা সাংসদ হলে বিষয়টি আরও খুটিয়ে দেখা যেত।
বর্তমানে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর। মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানো নিয়ে এক বছরেরও আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর এক বছরেরও বেশি সময় পরে– কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার মহিলাদের জন্য বিবাহের বৈধ বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাব পাস করেছে।
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরে– সরকার বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা আইন– ২০০৬এ একটি সংশোধনী আনবে। এছাড়াও বিশেষ বিবাহ আইন এবং হিন্দু বিবাহ আইন– ১৯৫৫এর মতো ব্যক্তিগত আইনগুলিতেও সংশোধন নিয়ে আসা হবে বলে জানানো হয়েছে। জয়া জেটলির নেতৃত্বে কেন্দ্রের টাস্ক ফোর্স ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নীতি আয়োগের কিছু সুপারিশ জমা দেয়। এই সুপারিশের ভিত্তিতেই বুধবার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সুপারিশের বিষয়গুলি ছিল মাতৃত্বের বয়স– অল্পবয়েসী মায়েদের মৃত্যুর হার কমানোর প্রয়োজনীয়তা– মায়েদের পুষ্টির সচেতনতা তৈরির মত সমস্যা।
এদিকে যে দু’টি যুক্তিতে মেয়েদের বর্ধিত বিয়ের বয়সের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন অনেকেই– তা হল এই আইনে বাল্য বিবাহ আটকানো আদপেই সম্ভব নয়। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৫এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৫১৬ থেকে ২০১৯২০তে বাল্য বিবাহ কমেছে খুবই কম। ২০১৫-১৬ তে যা ছিল ২৭¬– ২০১৯২০তে তা কমে হয়েছে কেবলই ২৩¬। এ কথাও মনে রাখা দরকার মেয়েদের বিয়ের বয়স আইন অনুযায়ী ১৮ হয় ১৯৭৮ সালে– কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমতে শুরু করে– মাঝের এতগুলি বছর আইন থেকেও তা কমানো বা আটকানো যায়নি। তৎকালীন সরকার যখন মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দিয়ে ও দারিদ্র্য দূরীকরণের নানা সরকারি নীতি প্রণয়ন করতে শুরু করেন– তখনই ধীরে ধীরে বাল্যবিবাহের মাত্রা কমতে থাকে। সে ক্ষেত্রে আইনত বিয়ের বয়স বাড়ানো হলেও তাতে লাভ তো নেইই– বরং সমস্যা তৈরি হবে অনেক বেশি।