ওয়াশিংটন, ২৫ এপ্রিল: ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আমেরিকায় তীব্রতর হচ্ছে বিক্ষোভ। ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যাপক আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। দীর্ঘদিন ধরে চলা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হল আরও এক বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’র দাবিতে পথে নামল মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। পাশাপাশি গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সামরিক অস্ত্র দেওয়ার বিরুদ্ধেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। পড়ুয়াদের জোরালো দাবি, ইসরাইলকে সামরিক অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করুন অস্ত্র সরবরাহকারী সংস্থাগুলি।
এদিকে, কদিন আগেই ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ করে বাইডেন প্রশাসনের রোষানলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে পুলিশ দিয়ে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের তাবু ভেঙে দেয় মার্কিন পুলিশ। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় একাধিক পড়ুয়াকে। এদিন শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় ও গ্রেফতার করা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ক্যাম্পাসে পুলিশি ব্যবস্থা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা।
গাজাবাসী দীর্ঘ ছয় মাস ধরে সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে বলে দাবি পড়ুয়াদের। শিক্ষার্থী আহলামের কথায়, ‘আমরা দাবি জানাচ্ছি, জনগণকে ধ্বংস করতে যে সমস্ত সামরিক সংস্থাগুলি অস্ত্র তৈরি করছে অবিলম্বে অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ করা হোক।’ বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ‘নভেম্বরে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি গাজায় হামলা চালাতে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা এবং আর্থিক সাহায্য অব্যাহত রাখেন। তবে মানুষ নির্বাচনে এর জবাব দেবে। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে পারবেন না।’ বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা সাফ জানিয়েছেন, ‘গণহত্যা’ চালাতে ইসরাইলকে অর্থ সাহায্য বন্ধ না করলে, আগামী নির্বাচনে বাইডেনকে বহিষ্কার করা হবে।
গত সপ্তাহে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয় মার্কিন পুলিশ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বহিষ্কার করা থেকে পুলিশ দিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। একশোর বেশি পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন পড়ুয়ারা। এরপরই অন্যান্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও বিক্ষোভের ডাক দেয়। আমেরিকার বিভিন্নে শহরের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে সামিল হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, টুইন সিটিস; সোয়ার্থমোর কলেজ, পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ ইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, ম্যাসাচুসেটসের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যান আরবারের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এদিকে, গত ১৭ এপ্রিল থেকে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৫০টি তাঁবু গেড়ে সেখানে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন বহু পড়ুয়া।
প্রসঙ্গত, গত ছ’মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় লাগাতার গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। হামলায় এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪৯ জনে। আহত হয়েছেন আরও ৭৬ হাজার ৯০১ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭ হাজার মানুষ। গাজায় গণহত্যার শুরু থেকেই ইসরাইলকে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো।