পুবের কলম প্রতিবেদক: যাদবপুরের পিএইচডিতে ওবিসি সংরক্ষণ মানা হচ্ছে না, এই অভিযোগ আগেই উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, সংরক্ষণ নিয়ম কার্যকরের বিষয়টি আর্টস, সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফ্যাকাল্টিদের উপর দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে।
পিএইচডির ভর্তি নিয়ে প্রতিটি বিভাগে একটি কমিটিও রয়েছে। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোস্টার অনুসরণ করতে বলা হয়েছে প্রতিটি বিভাগকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কথায়, লিখিত পরীক্ষায় অনেক মুসলিম, ওবিসি পাশ করছেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ে তাঁদের ‘নট-কোয়ালিফাই’ দেখানো হচ্ছে।
পিএইচডি’র ভর্তি নিয়ে অনেকের অভিযোগ, মুসলিম-ওবিসি-‘এ’ এবং এসসি-এসটি প্রার্থীদের প্রতি বিভাগীয় প্রধানদের ‘বিতৃষ্ণা’ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের একাংশ।
সম্প্রতি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬টি বিভাগের পিএইচডির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই তালিকায় মোট ১৭৩ জনের মধ্যে এবিসি-এ ক্যাটাগরিতে একজন মাত্র মুসলিম প্রার্থীর নাম রয়েছে।
‘ভ্যাকেন্সি ম্যাট্রিক্স ফর পিএইচডি অ্যাডমিশন ২০২২-২৩’-এর তালিকায় দেখা যাচ্ছে, মোট পিএইচডির আসন ৩৭০টি। এর মধ্যে ক্যান্ডিডেট ছিলেন জেনারেল ১৯২, এসসি-৭৮, এসটি-২৫, ওবিসি-‘এ’ ৩৬, ওবিসি-‘বি’-২৭, অন্যান্য-১২। প্রকাশিত তালিকার মধ্যে একজন মাত্র ওবিসি ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রার্থীকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ, পিএইচডির জন্য ওবিসি-এ’এর সংরক্ষিত পদ ছিল ৩৬টি। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে মাত্র একজন মুসলিমকে।
চাকরি অথবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দেওয়ার আইন করেছে সরকার। সেই আইন লাগু করার জন্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। সেই নির্দেশ অনুসারে রিজার্ভেশন নিয়ম মেনে চাকরি ও ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে না বলে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এবার ফের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নিয়ম পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম থাকলেও সেই আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগসহ ভর্তিতে বিভাগ অনুসারে কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটিতে বিভাগের প্রধানসহ অন্যান্যরা থাকেন। নিয়োগের বিষয়টিও এই কমিটিগুলির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যাদবপুরের অধিকাংশ বিভাগের কমিটিতে কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিকে রাখা হয় না বলেও অভিযোগ। নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে ওই কমিটিগুলিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ নিয়ে নিয়োগের পাশাপাশি পিএইচডি, এমফিলে ভর্তির ক্ষেত্রেও ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে চরম বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে আবেদনকারীদের একাংশ।
গবেষকদেরই অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগের ভর্তিতে সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের ‘নট সুইটেবল’ লিখে দেওয়া হয়। তাঁদের বক্তব্য, পিএইচডির ভর্তিতে অনেক সময় মেধাবী পড়ুয়ারাও বঞ্চিত হচ্ছেন। পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, এই বিষয়ে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আবার ওবিসি প্রার্থী জেনারেল ক্যাটেগরির চেয়ে বেশি নম্বর পেলেও তাকে ওবিসি সংরক্ষণের আওতাতেই রেখে দেওয়া হচ্ছে। অথচ, হিসেব মতো তাকে জেনারেল ক্যাটেগরিতে নেওয়া উচিত। এ ধরনের কৌশল করে ওবিসি প্রার্থীদেরকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার পুবের কলমকে বলেন, পিএইচডির ভর্তি রোস্টার মেনেই করা হয়ে থাকে। হয়তো ভ্যাকেন্সি-পোস্ট সবকটা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এ বছর যতগুলি পোস্ট রয়েছে, আগামী বছর সেই পোস্ট কমতে বা বাড়তে পারে। ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে ফ্যাকাল্টিতেও আলোচনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার রিসার্চ স্কলারদের কোনও রিজারভেশন থাকে না, কারণ, জেআরএফ, নেট উত্তীর্ণদের সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে। তবে ওবিসি সংরক্ষণে কোনও গাফিলতি রয়েছে কী না, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এ দিকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে সংরক্ষণ নিয়ম কার্যকর নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সংরক্ষণ কার্যকর ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা অনগ্রসর কল্যাণ ডিপার্টমেন্ট শিক্ষা দফতরের কাছে জানতে চায়।
ব্যাকওয়ার্ড ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের এক আধিকারিক আগেই জানিয়েছিলেন, এসসি, এসটি’র পাশাপাশি ওবিসি ‘এ’-১০ শতাংশ, ওবিসি ‘বি’-৭ শতাংশ সংরক্ষণ অনগ্রসর দফতরের নিয়ম অনুসারে কার্যকর করতে হবে। এই নিয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরে নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অনগ্রসর দফতর। সংশ্লিষ্ট দফতর আরও জানিয়েছে, সংরক্ষণ নিয়ম মানা হচ্ছে না, এই অভিযোগ দফতরে জমা পড়েছে।